কুমিল্লার রনির দোকানে ৬২ রকমের চা

কুমিল্লা নগরের চায়ের আড্ডা দোকানে হরেক রকমের চা বানিয়ে বিক্রি করেন রনি সাহা
ছবি: প্রথম আলো

কোনোটি মালাই দিয়ে, কোনোটি চকলেট দিয়ে, কোনোটি আবার তেঁতুল বা মরিচ দিয়ে তৈরি চা। কুমিল্লা নগরের চকবাজার এলাকার রনি সাহার চা–দোকানে মেলে ৬২ রকমের চা। কেবল চা বিক্রি করেই স্বাবলম্বী রনি। প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত এই চায়ের দোকান খোলা থাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে চা পান করতে আসেন অসংখ্য মানুষ। তবে দিনের চেয়ে রাতে এখানে চা বিক্রি হয় বেশি।

কুমিল্লা নগরের আমির দিঘির পশ্চিম পাড়ের শাপলা মার্কেটে চায়ের আড্ডা নামে রনির দোকানটি। চকবাজার-টিক্কারচর সড়ক লাগোয়া ব্যস্ততম স্থানে এই চায়ের দোকান। কেউ মাটির পেয়ালায় চা পান করেন, কেউ ওয়ানটাইম গ্লাসে, কেউ কাচের গ্লাসে। দোকানে ছয়জন কর্মচারী। তাঁদের ফুরসত নেই। ভোক্তাদের উপচে পড়া ভিড়, একেকজনের একেক রকম চায়ের ফরমাশ।

ঘড়ির কাঁটায় তখন রোববার রাত ১২টা। তখন দেখা যায়, তরুণেরা বসে আছেন চা নিয়ে। কেউ চুমুক দিচ্ছেন, কেউ হাতে নিয়ে দেখছেন, কেউ সেলফি তুলছেন।

চায়ের আড্ডা দোকানের দেয়ালে সাঁটানো চায়ের নামের দীর্ঘ তালিকা চোখে পড়ে। এগুলোর মধ্যে আছে স্পেশাল মনপুরা চা, ইরানি চা, চকলেট চা, তাজ চা, স্পেশাল বাহাদুর মালাই চা, সুলতান চা, কাজু মালাই তান্দুরি চা, কাজু ক্রিম মালাই চা, কাজু স্ট্রবেরি চা, ক্রিম মালাই চা, মাসালা তান্দুরি চা, স্পেশাল দুধ মাসালা, জাফরানের দুধ চা, খেজুর–নারিকেলের চা ইত্যাদি।

আলাপচারিতায় রনি সাহা তাঁর স্বপ্নের চা–দোকানের গল্পটা মেলে ধরেন। বলেন, ‘১৫ বছর বাহরাইন, দুবাই ও ভারতের কলকাতায় ছিলাম। তখন দেখতাম, একেক দেশে একেক রকমভাবে চা বানানো হয়। এসব চা খেতে ভিন্ন স্বাদ। এরপর মনে হলো, দেশে গিয়ে আমি এ ধরনের একটি চায়ের দোকান দেব। পাঁচ বছর আগে চকবাজারের কুমিল্লা আলীয়া মাদ্রাসা লাগোয়া একটি ছোট আকারের দোকান ভাড়া নিই। এরপর চালু করি চায়ের দোকান ক্যাফে হাউজ। একপর্যায়ে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। এক বছর আগে ১২ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় দোকান নিই। দোকানের নাম দিই চায়ের আড্ডা। তখন নয় লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। দোকানে এখন ছয়জন কর্মচারী। সব মিলিয়ে দোকানে প্রতি মাসে খরচ হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কর্মচারীদের সর্বোচ্চ বেতন আছে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া চা–পাতা, দুধ, চকলেট, নানা ধরনের উপকরণ কেনা বাবদ খরচ আছে। প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার কাপ চা বিক্রি হয়।’

কুমিল্লা নগরের দক্ষিণ চর্থা থিরাপুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন,  ‘প্রায়ই এখানে চা পান করতে আসি। ভালো লাগে।’ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমি তেঁতুল আর মরিচের চা খেলাম, ভিন্ন স্বাদ। আগে স্পেশাল মালাই বাহাদুর চা খেয়েছিলাম, সেটিও স্বাদে অতুলনীয়।’

রনি সাহার বাড়ি কুমিল্লা নগরের সাহাপাড়া এলাকায়। বিজয় সাহা ও কাজল রানী সাহার দুই ছেলের মধ্যে রনি সাহা বড়। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। রনি বলেন, ‘এই চায়ের দোকান থেকে আমার প্রতি মাসে লাখের ওপরে লাভ থাকে। আমার দোকানে চা ভোক্তার সামনে বানানো হয়। উপকরণ ঠিকমতো দিচ্ছি কি না, সেটা ভোক্তা দেখতে পারেন। চায়ের আড্ডা নিয়ে ফেসবুকে একটি পেজ খোলা আছে। এটা দেখেও ভোক্তারা আসেন।’