মানিকগঞ্জে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি হামলায় আহত ৪

মানিকগঞ্জ জেলার মানচিত্র

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুসারীদের মধ্যে দুই দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।

আজ বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ইউসুফ দেওয়ান, তাঁর সহযোগী আবদুর রাজ্জাক ও ইউসুফের বোন এবং উপজেলার ধূলশুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় আধিপত্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের বিরোধ চলে আসছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শনিবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছেলে নবীনূর দেওয়ানসহ আটজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। এ নিয়ে সংসদ সদস্যের অনুসারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান তাঁর ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন।

ওই ফেসবুক পোস্টে উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ইউসুফ দেওয়ান মন্তব্য করেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে আজ বেলা একটার দিকে নবীনূর দেওয়ান ১০-১২ জন সহযোগী নিয়ে উপজেলা সদরে লেছড়াগঞ্জ বাজারে ইউসুফ দেওয়ানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যান। এরপর উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে নবীনূরের সঙ্গে থাকা যুবকেরা ইউসুফকে মারধর করেন। এ সময় বাধা দিতে গেলে ইউসুফের সহযোগী রাজ্জাক ও ইউসুফের বোনকেও মারধর করা হয়।

এ ঘটনার পর বেলা দুইটার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান ও তাঁর ২০-২৫ জন সহযোগী উপজেলা চত্বরে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুসারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা আবুল কালামকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শ্রমিক লীগের নেতা ইউসুফকে জেলা সদর হাসপাতালে ও আহত অপর তিনজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

সন্ধ্যায় নবীনূর দেওয়ানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের লোকজন তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। মামলার বিষয় নিয়ে সংসদ সদস্যের অনুসারীরা ফেসবুকে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে তাঁর ছেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। উল্টো অভিযোগ করে দেওয়ান সাইদুর বলেন, সংসদ সদস্যের অনুসারীরা তাঁর লোকজনকে মারধর করেছেন। পুলিশ তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীদের আটক করেছে।

বিষয়টি নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তাঁর মুঠোফোন নম্বরে খুদেবার্তা পাঠালেও তাঁর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমানের মুঠোফোনে কল করেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার আদিত্য বলেন, এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে উপজেলা চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে ওসি জানান।