স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভিডিওতে হাফ প্যান্ট ও শার্ট পরা অবস্থায় আরিফুলকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকা ব্যক্তির নাম মো. মেহেদী হাসান (২৬)। তিনি ওই গ্রামের আফসার বাগমারের ছেলে। মো. আবদুল কাইয়ুম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত গাড়ির কাচ ভেঙে ভেতর থেকে টাকা চুরির অভিযোগে তাঁকে মারধর করা হয়।

নির্যাতনের শিকার আরিফুল ইসলামের ভাই আশরাফুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁর ভাই টাকা চুরি করেননি। প্রহলাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাওসার বাগমারের নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তাঁর ভাইকে চুরির অপবাদ দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় অনেকে উপস্থিত থাকলেও ভয়ে কেউ বাধা দিতে এগিয়ে যাননি। খবর পেয়ে তাঁর মা ফরিদা খাতুন দৌড়ে ঘটনাস্থলে যেতে চেষ্টা করেন। কিন্তু কাওসারের লোকজন তাঁকে ঘটনাস্থলে যেতে দেননি।

ঘটনার বর্ণনায় দিয়ে আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার বাড়িতে শুয়ে ছিলেন আরিফুল। এ সময় হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হন কাওসারসহ বেশ কয়েকজন। তাঁরা তাঁকে বাড়ি থেকে জোর করে ধরে নিয়ে যান। এরপর বাড়ির ৩০০ মিটার দূরে একটি কাঁঠালগাছে উল্টা করে ঝুলিয়ে পেটান। একপর্যায়ে আরিফুলকে নামিয়ে মাটিতে ফেলে পেটানো হয়। এ সময় আরিফুল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন নির্যাতনকারীরা।

মারধর করা মেহেদী হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে প্রহলাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক সদস্য ও মেহেদী হাসানের ভাই কাওসার বাগমার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। আর শুধু মেহেদী পেটায়নি, সেখানে উপস্থিত আরও অনেকেই পিটিয়েছে। আরিফুল এর আগে বহুবার চুরি করে ধরা খেয়েছে। বৃহস্পতিবার একজনের গাড়ির কাচ ভেঙে অনেকগুলো টাকা চুরি করেছে সে। এ জন্য স্থানীয় লোকজন তাকে পিটিয়েছে।’

শ্রীপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুর রহমান শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৪০ জনের উপস্থিতিতে আরিফুলকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছেন হাফ প্যান্ট ও শার্ট পরা এক ব্যক্তি। সঙ্গে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করা হচ্ছিল। ‘তুই চোর, তুই টাকা নিসস’ বলে কিছুক্ষণ পিটিয়ে বিরতি নেন। এরপর আবার পেটাতে শুরু করেন ওই ব্যক্তি। বাঁধন খুলে মাটিতে নামানোর পর আরিফুল চিৎকার করছিলেন আর বলছিলেন, ‘ভাইগো, বিশ্বাস করেন, আমি টাকা নেই নাই। আমি চুরি করি নাই। আমি দুপুরে বাড়িতে ঘুমায়া আছলাম। আমারে আর মাইরেন না।’