মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের টেকনাফ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আবারও মর্টার শেল ও ভারী গোলা বর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা পর্যন্ত প্রচণ্ড শব্দে সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠেছে। সীমান্ত এলাকার লোকজনের মতে, মংডু টাউনশিপের আশপাশের এলাকায় নতুন করে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এমন বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক রয়েছে কোস্টগার্ড ও বিজিবি।
গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত অনবরত বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ সীমান্ত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের যে এলাকায় বর্তমানে হামলা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকের বসবাস। তাঁদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঠাঁই দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। কোস্টগার্ড ও বিজিবি সতর্ক আছে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। ওই সময় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। তারা বর্তমানে টেকনাফ, উখিয়া ও নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, রাখাইনে যুদ্ধের জেরে বর্তমানে মংডু ও বুথিডংয়ে ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আটকা পড়েছেন।
এদিকে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএনের) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আমির জাফর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চলছে। এতে করে সাধারণ রোহিঙ্গারা প্রাণ রক্ষায় নিরাপদ আশ্রয়ে পাশাপাশি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। তবে নতুন করে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান রয়েছেন বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা। এ অবস্থায় আমরাও বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোয় কড়া নজরদারি রাখছি।’
টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে মিয়ানমারের অনবরত বিকট বিস্ফোরণের শব্দ এখনো থামেনি।