‘দেশে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুট, মেগা কমিশন, মেগা বাণিজ্য চলছে’

বগুড়ায় গণতান্ত্রিক মঞ্চের পথসভায় বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

গণতন্ত্র মঞ্চের রোডমার্চ কর্মসূচির তৃতীয় দিন বগুড়ায় পথসভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘দেশে এখন মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুট, মেগা কমিশন, মেগা বাণিজ্য এবং ডলার পাচারের মহোৎসব চলছে। লুটপাটের মহোৎসবের জন্য বাংলাদেশ কয়লা কিনতে পারে না, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না। বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছি, সেই টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমরা এ রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিন পার করছি।’

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত এক পথসভায় এসব কথা বলেন জোনায়েদ সাকি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে ৪ থেকে ৭ জুন ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ করছে গণতন্ত্র মঞ্চ।

আরও পড়ুন

পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বগুড়া শহরের সাতমাথায় সমাবেশ করার কথা ছিল তাদের। কিন্তু যানজটের কারণ দেখিয়ে শহরের শহীদ খোকন পার্কে সমাবেশ করতে বলে পুলিশ। তবে একই সময়ে সেখানে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় জেলা যুবলীগ। পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা দেখা দিলে গণতন্ত্র মঞ্চকে সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে সমাবেশ করার অনুরোধ করে পুলিশ। পরে গণতন্ত্র মঞ্চ সমাবেশ কর্মসূচি বাতিল করে সেখানে পথসভা করে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী প্রথম আলোকে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ প্রথমে সাতমাথায় সমাবেশ করার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু যানজটের কথা ভেবে তাঁদের শহীদ খোকন পার্কে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানে অন্য একটি সংগঠন পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ায় সংঘাত এড়াতে গণতন্ত্র মঞ্চকে অন্যত্র সমাবেশ করতে বলা হয়।

পথসভায় জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, এখন উন্নয়ন মানে বড় বড় প্রকল্প, যে প্রকল্পে ১ টাকা লাগে, ওই প্রকল্পে ১০ টাকা বাজেট করে ৯ টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। এ জন্য দেশে ডলার–সংকট। এই চুরির টাকা পাচারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাপানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকায় যাওয়ার দরকার কী? কিন্তু উনি যে পুলিশ, প্রশাসন ও রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ওপর ভর করে আছেন, তাঁরা চুরি-দুর্নীতি করে টাকা পাচার করেছেন বিদেশে। তাহলে চুরি করা টাকা নিয়ে কোথায় যাবেন পুলিশ ও আমলারা? আসলে শেখ হাসিনার পায়ের তলায় মাটি নেই।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) বগুড়ার সভাপতি মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও জেএসডির কেন্দ্রীয় সদস্য রেজাউল বারীর সঞ্চালনায় পথসভায় বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার,  জেএসডির নেতা সৈয়দ বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তাই তারা বিএনপিসহ অন্য দলের নেতা–কর্মীদের ওপর জুলুম নির্যাতন করছে। কিন্তু ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে উঠেছে।

এর আগে গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা বন্দরের জয়পুরহাট সড়কের মোড়ে অস্থায়ী মাছবাজারে সমাবেশ করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। এ সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের বহনকারী গাড়িবহর বগুড়া শহরে ফিরছিল। সন্ধ্যা সাতটার দিকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মোকামতলা বাজারে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। এতে গণতন্ত্র মঞ্চের তিন নেতা আহত হন।

এরপর গণতন্ত্র মঞ্চের রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতারা বগুড়া শহরের যে আবাসিক হোটেলে উঠেছেন, সেখানে হামলা হয় বলে পরে জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করেন। গতকাল রাত ১০টার দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথার অদূরে আমজাদিয়া আবাসিক হোটেলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে পথসভা শুরুর আগে জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, একের পর এক গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশে বাধা দেওয়া মূলত শাসকদলের স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বহিঃপ্রকাশ। এ সবকিছুই হচ্ছে পুলিশের নির্লিপ্ততা এবং পরোক্ষ ইন্ধনে। সাতমাথায় আজকের সমাবেশে যুবলীগ ও পুলিশ বাধা দেওয়ায় তাঁরা সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে পথসভা করে সরকার ও প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক আচরণের নিন্দা জানাচ্ছেন।