ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের অস্ত্রধারী দেহরক্ষী, ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি সাংবাদিকেরা

ভোট চলাকালীন কেন্দ্রের বাইরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন একজন দেহরক্ষী। আজ সোমবার দুপুরে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া সহিতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আরেক ইউপি সদস্যকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে আসতে দেখা গেছে। এদিকে আড়াইহাজার উপজেলায় পর্যবেক্ষক কার্ডধারী সাংবাদিকদের ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার সকাল নয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কোথাও কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।

বেলা ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া সহিতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন কায়েতপাড়া ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান বজলুর রহমান। এ সময় তাঁর সঙ্গে দুজন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী ছিলেন। বজলুর রহমান কেন্দ্রে প্রবেশের সময় অস্ত্রধারীরা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেহরক্ষীরা কেন্দ্রের বাইরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করেন। বজলুর রহমান রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, মাদকসহ বেশ কিছু মামলা রয়েছে।

একই কেন্দ্রে সকাল ১০টায় ইউপি সদস্যদের নিয়ে ভোট দেন মুড়াপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ ওরফে আলমাস। ভোট দেওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান। বেলা সোয়া ১১টার দিকে দুজন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে আবার ভোটকেন্দ্রের সামনে আসেন। বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত তোফায়েলের দেহরক্ষীরা কেন্দ্রের বাইরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করেছিলেন। এ সময় রূপগঞ্জের অন্যান্য জনপ্রতিনিধির সঙ্গে তোফায়েল কেন্দ্রের বাইরে বসেছিলেন।

নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, নির্বাচনের সময় বৈধ-অবৈধ সব ধরনের অস্ত্র প্রদর্শন ও কেন্দ্র এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেওয়া নিষেধ হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে অস্ত্রধারীদের কোনো প্রকার বাধা দিতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে বজলুর রহমান ও তোফায়েল আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁদের সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিয়ুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী এটা করা যায় না। নির্বাচনের পুরো সময় আমরা পর্যবেক্ষণে ছিলাম। প্রার্থীদের সঙ্গেও একাধিকবার কথা হয়েছে। আমাদের কাছে কেউ এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেনি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

ভোটকক্ষে সাংবাদিককে প্রবেশে বাধা

এদিকে আড়াইহাজার পাইলট মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটকক্ষে পর্যবেক্ষক কার্ডধারী সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুপুর ১২টার দিকে সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী সীমা রানী পাল সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহিদা মোশাররফের পক্ষে কয়েকজন যুবক দল বেঁধে বারবার ভোটকক্ষের বাইরে মহড়া দিচ্ছিলেন।

এ বিষয়ে তিনি একজন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানালে ওই পুলিশ অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি ভোটকক্ষের ভেতরের স্বচ্ছতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
কেন্দ্রে থাকা বেসরকারি টেলিভিশনের তিনজন সাংবাদিক প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ১০টার পর থেকে ভোটকক্ষে কোনো সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

ভোটকক্ষ পরিদর্শন করতে চাইলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাঁদের জানিয়েছেন, ভোটকক্ষে সাংবাদিক প্রবেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিষেধাজ্ঞা আছে। পরে তাঁরা বিষয়টি ইউএনও মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ইউএনও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।

এ বিষয়ে ইউএনও রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে ভোট শুরু হওয়ার পর কয়েকজন টেলিভিশন সাংবাদিক ক্যামেরা নিয়ে ভোটকক্ষে প্রবেশ করেছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে সাংবাদিকদের ক্যামেরা নিয়ে কক্ষে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিই। এ ছাড়া পুরো নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে।’