জমে উঠেছে দুই খালাতো ভাইয়ের ভোটযুদ্ধ

রংপুরের বদরগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলে রাব্বীর গণসংযোগ। গতকাল বদরগঞ্জ বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় আপন দুই খালাতো ভাই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটারদের সাড়া না থাকলেও নির্বাচনী মাঠে দুই ভাইয়ের মধ্যে চলছে পরস্পরবিরোধী বাগ্‌যুদ্ধ।

নির্বাচনে ওই পদে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় দুই ভাইয়ের এক ভাই এবার বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে চলেছেন। আগামী ৫ জুন ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিদ্বন্দ্বী ওই দুই প্রার্থী হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী ওরফে সুইট ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান তবিকুর চৌধুরী ওরফে পলিন। ফজলে রাব্বীর পক্ষে নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ও বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র টুটুল চৌধুরী।

রংপুরের বদরগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসান তবিকুর চৌধুরীর গণসংযোগ। গতকাল বদরগঞ্জ পৌরবাজারে
ছবি: প্রথম আলো

চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসান তবিকুর চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে একইভাবে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার ওরফে বিটু। হাসান তবিকুর বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র টুটুল চৌধুরী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর আপন চাচাতো ভাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বনাথ সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধায় ঢাকা থেকে বদরগঞ্জে এসে হাসান তবিকুর চৌধুরীর নির্বাচনী কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনা দিয়ে ওই রাতেই চলে গেছেন।

হাসান তবিকুর চৌধুরী রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবরে ২৯ মে বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র টুটুল চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরপরই আচরণবিধি প্রতিপালনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাশপিয়া তাসরিন মেয়র টুটুল চৌধুরীকে কারণ দর্শানোসহ তলব করেছিলেন। এ  ব্যাপারে কাশপিয়া তাসরিন গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, এক প্রার্থীর অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র টুটুল চৌধুরীর কাছে লিখিত ব্যাখ্যা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানোসহ তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলে রাব্বী সাংবাদিকদের কাছে গতকাল অভিযোগ করেছেন, হাসান তবিকুর চৌধুরীর ভগ্নিপতি নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তা নির্বাচনে হাসান তবিকুর চৌধুরীর পক্ষে এলাকায় পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।

তবে হাসান তবিকুর চৌধুরী ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এলাকার অন্তত ৩০ জন সাধারণ ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই খালাতো ভাই নির্বাচনী মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা পরস্পরের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও কটাক্ষ করে নির্বাচনী সভা-সমাবেশগুলোতে বাগ্‌যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন।

আমরুলবাড়ী গ্রামের ভোটার বেসরকারি চাকরিজীবী মমিনুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই ভাইয়ের মধ্যে ভোটযুদ্ধ নয়, শুরু হয়েছে রীতিমতো পরস্পরবিরোধী বাগ্‌যুদ্ধ।

মধুপুরের সাধারণ ভোটার মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ভোট দেও আর না দেও, ওঁরা (দুই খালাতো ভাই) এক ভাইতো চেয়ারম্যান হইবেই। এইগলা ভোট দিবার মুই যাবার নেও।’
ওই নির্বাচন মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, ওই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ তিন নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতিমধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করীম।

আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী বা সাধারণ কোনো মানুষ ওই নির্বাচনে কোনো পদেই প্রার্থী হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর ও ভোটে আস্থাহীনতা এবং সরকারের দমন নিপীড়ন এর মূলত কারণ। এলাকার সাধারণ মানুষও ভোটে আস্থা রাখতে পারছেন না। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় এবং ভোটে আস্থাহীনতার কারণে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে কোনো উত্তাপ নেই বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।