জামালপুরে ছাত্রকে শাসন করায় শিক্ষককে শাসালেন ছাত্রলীগ নেতারা

ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে উল্টো শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে নেতা–কর্মীদের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার দুপুরে জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনেছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের এক ছাত্রকে ‘শাসন’ করায় বিভাগীয় প্রধানকে শাসিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে নেতা–কর্মীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। ওই শিক্ষকের নাম সৈয়দ নিয়ামুল হক। তিনি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে আছেন। তাঁর সঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

দুপুরে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। স্লোগানে তাঁরা কলেজ কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের বিষয়ও তুলে ধরছেন। আর অধ্যক্ষের কক্ষে শিক্ষকেরা বৈঠকে বসছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করছেন। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি গাড়ি ক্যাম্পাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থী ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের দুজন ছাত্রের অনুপস্থিতির জন্য ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়। আজ ওই দুই ছাত্রের জরিমানার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। একই বর্ষের শিক্ষার্থী নিজামুল হক ওই দুই সহপাঠীকে নিয়ে বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ নিয়ামুল হকের কাছে যান। তিনি ওই দুই ছাত্রকে ওই শিক্ষকের কাছে নিয়ে ‘আমার লোক’ বলে পরিচয় করিয়ে দেন। তখন ওই শিক্ষক নিজামুলকে জিজ্ঞাসা করেন, তাঁরা (দুই ছাত্র) দুজন একই বর্ষের ছাত্র হলে তোমার লোক হলো কীভাবে? এ নিয়ে নিজামুলের সঙ্গে ওই শিক্ষকের সামান্য বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

সূত্র জানায়, নিজামুল হক বাগ্‌বিতণ্ডার বিষয়টি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলামকে (তন্ময়) জানান। কিছুক্ষণের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জন নেতা-কর্মী ওই বিভাগের প্রধান সৈয়দ নিয়ামুল হকের কাছে যান। তাঁরা ছাত্রদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষককে শাসান। সেখান থেকে বেরিয়ে নেতা-কর্মীরা ওই শিক্ষকের অপসারণ দাবি তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন।

জানতে চাইলে সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ নিয়ামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই তিন ছাত্র যখন আমার কক্ষে ঢোকে, তখন আমি জরুরি কাজ করছিলাম। তিনজনের মধ্যে নিজামুল সঙ্গে থাকা দুজনকে তাঁর লোক বলে পরিচয় করিয়ে দেন। নিজামুল বলছিলেন, “স্যার ওদের চিনে রাখেন, তাঁরা আমার লোক।” তখন আমি নিজামুলকে বলেছি, ওদের সমস্যা, ওরা বলবে, তুমি কেন? তুমি কি ওদের অভিভাবক? আমি তখন তাঁদের ধমক দিয়েছি। তখন তাঁরা চলে যায়। এ ঘটনার প্রায় ২০ মিনিট পর শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ৪০–৫০ জনকে নিয়ে আমার কক্ষে প্রবেশ করেন। তখন তৌহিদুল ধমকের সুরে আমাকে বলছিলেন, “আপনি ওদের কী বলেছেন?” আমি বলি, “ওরা আমার ছাত্র। তুমি (তৌহিদুল) কি এখানে এসে এভাবে আমাকে এসব বলতে পার?” তখন তাঁরা সবাই হইহুল্লোড় শুরু করেন। এককথায় যদি বলি, আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনার্স প্রথম বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষা চলছে। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। যাঁরা অংশ নেননি, তাঁদের প্রত্যেককে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনেক ছাত্র দরিদ্র। তাঁরা টাকা দিতে পারছেন না। ওই টাকা যাতে না লাগে, সে জন্য ওই শিক্ষকের কাছে নিজামুলকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি (শিক্ষক) তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। শুধু তা–ই নয়, ছাত্রলীগ নিয়েও নানা রকম কথাবার্তা বলেছেন। তাঁদের মারতেও যান। পরে ওই বিভাগে আমি যাই। আমি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যার উত্তেজিত হয়ে যান। ওই স্যারই খারাপ ব্যবহার করেছেন আমাদের সঙ্গে।’

জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খাবীরুল ইসলাম খান বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি কলেজে যান। ঘটনার বিস্তারিত শুনে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাদের (ছাত্রলীগ) কোনো অভিযোগ থাকলে আমার কাছে এসে বলতে পারত। এভাবে বিভাগে গিয়ে শিক্ষকের সঙ্গে তর্কে জড়ানো ঠিক হয়নি। শুধু তা–ই নয়, সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা কলেজের ছুটির ঘণ্টাও বাজিয়েছে। শিক্ষকদের নিয়ে বসেছেন। এ বিষয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে।