ছোট দুই ভাই–বোনের পাশে হলো বড় বোনের কবর

তিন সন্তানকে হারিয়ে মা আইরিছ বেগমের আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে দেওয়া বাসি বিরিয়ানি খেয়ে ছোট দুই ভাই–বোনের পর মারা যাওয়া বড় বোনকে দাফন করা হয়েছে তাদের পাশের কবরে। প্রথমে মারা যায় দুই ভাই–বোন সৌরভ (৫) ও খাদিজা (৬)। পরের দিন মারা যায় তাদের বড় বোন সাথী আক্তার (১৪)। গতকাল শুক্রবার রাতে সৌরভ ও খাদিজার কবরের পাশে সাথীর দাফন সম্পন্ন হয়। তারা তিনজন শরীয়তপুরের জাজিরার মুলাই ব্যাপারিকান্দি গ্রামের শওকত দেওয়ান ও আইরিছ বেগম দম্পতির সন্তান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সাথীর লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান স্বজনেরা। রাতেই তাকে দাফন করা হয়।

তিন শিশুর স্বজনদের অভিযোগ, কিটনাশকের প্যাকেটে ভরে ফ্রিজে রাখা এক সপ্তাহের বাসি বিরিয়ানি খেয়ে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ওই শিশুদের পরিবারের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে জাজিরা থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

স্বজনদের ভাষ্য, বিয়ের অনুষ্ঠানের বেচে যাওয়া বিরিয়ানি গত মঙ্গলবার দুপুরে খাদিজা ও সৌরভকে খেতে দেন প্রতিবেশী রওশন আরা। তাদের সঙ্গে করে আরও কিছু খাবার বাড়িতে পাঠান তিনি। ওই খাবার খায় সাথী। এর কিছু সময় পর তিনজনই বমি করতে থাকে। তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরিস্থিতির অবনতি হলে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই রাতেই খাদিজা ও সৌরভের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সাথীর মৃত্যু হয়।

তিন শিশুর মা আইরিছ বেগম কান্না করতে করতে বলেন, ‘রওশন জেনেশুনে আমার বাচ্চাগুলানরে এমন খাবার কেন খাওয়ালো? আমি এখন কেমনে বাঁচুম?’ ওই শিশুদের ফুফা বাদশা মাদবর ঘটনাটি তদন্তের দাবি জানান।

আরও পড়ুন

এদিকে খাদিজা ও সৌরভের মারা যাওয়ার খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই প্রতিবেশী রওশন আরা ও আনোয়ার হোসেন বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। ওই বাড়িতে পাওয়া গেছে রওশন আরার মা আলেয়া বেগমকে। তিনি বলেন, ‘কীভাবে কী হয়ে গেল, আমরা বুঝতে পারছি না।’

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিরিয়ানি খেয়ে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

আরও পড়ুন