মাদারীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা বললেন, ৯ হাজার ভোট আমি পিটাইয়া দিব

নেতা-কর্মীদের সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন মাদারীপুরের কালকিনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল আলম মৃধা
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন মাদারীপুরের কালকিনী উপজেলার একটি ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে ৯ হাজার ভোট নিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে কালকিনির মিয়ারহাট উচ্চবিদ্যালয়ের একটি কক্ষে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল আলম মৃধা। তিনি উপজেলার শিকারঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁর দাবি, ভিডিওটি সম্পাদনা করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি এ ধরনের বক্তব্য দেননি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। চেয়ারে বসে আছেন আরও কয়েকজন। এ সময় সিরাজুল আলম মৃধা সামনে থাকা লোকজনের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁকে বলতে দেখা যায়, ‘প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের ৯ হাজার ভোট আমি পিটাইয়া দিব। আমি শিওর দিলাম, ভাই-ব্রাদারকে নিয়া। সবার সামনে প্রতিশ্রুতি দিলাম। হাতে-পায় ধরিয়া লাগলেও আমি পিটাইয়া দিব। আমি একা নয়, ভাই-ব্রাদারকে সঙ্গে নিয়া ভোট পিটাইয়া দিব। এখানে এমপি হইলে আরও ৫ থেকে ৭টা ইউনিয়নও পিটাইতে হবে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুলের এমন বক্তব্যের কারণে সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কিত হচ্ছেন বলে দাবি করেন, মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হবে, এটা নিয়ে এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিরাজুল আলম মৃধা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আমি লিখিত অভিযোগ দেব।’

বক্তব্যের বিষয়ে সিরাজুল আলম মৃধা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একাধিকবার ওই বিদ্যালয়ে গিয়েছি। তবে কখন কোন ভিডিও কে করছে, জানি না। আমি এত বোকা নই যে প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দেব। কিছু লোক আমার পেছনে লেগেছে, তারা এসব ভিডিও এডিট করে ভাইরাল করেছে। আমি ভোট পিটাইয়া দিব, এমন কোনো বক্তব্য দিই নাই।’

বক্তব্যের ঘটনায় আজ বিকেলে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন মাদারীপুর-৩ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার। অভিযোগটি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানান তিনি।

মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহাম্মেদ আলী বলেন, লিখিত অভিযোগ তাঁর দপ্তরে এখনো আসেনি। কাগজ হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।

মাদারীপুর-৩ আসনে আটজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। তাঁদের সবার মনোনয়নপত্র বৈধতা পেয়েছে। প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের আবদুস সোবহান গোলাপ, স্বতন্ত্র প্রার্থী কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসা. তাহমিনা বেগম, সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী প্রবীণ হালাদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নিতাই চক্রবর্তী, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের প্রার্থী নকুল কুমার বিশ্বাস, জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল খালেক ও জাকের পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন।

কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং মাদারীপুর সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসন। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৩ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৯৬০ জন। এ ছাড়া হিজড়া ভোটার আছেন ৩ জন।