বোন প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় চার বছরের ভাইকে অপহরণের পর হত্যা

হত্যা
প্রতীকী ছবি

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় চার বছর বয়সের একটি শিশুর স্কুলপড়ুয়া বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন সাকিব হাসান (১৯)। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। একপর্যায়ে সাকিব হাসান তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেন। এই পরিস্থিতিতে সাকিবের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অষ্টম শ্রেণির (১৪) ওই ছাত্রীর পরিবার অন্যত্র তার বিয়ে ঠিক করে। বিয়ের খবরে ক্ষিপ্ত সাকিব হাসান পরিকল্পিতভাবে ওই স্কুলছাত্রীর ভাইকে অপহরণের পর গলা টিপে হত্যা করেন। গতকাল সোমবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন সাকিব হাসান।

শিশুটি ৮ মে বিকেলে বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর সে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। ১৩ মে সন্ধ্যায় পলাশবাড়ী উপজেলার তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের ধানখেত থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান গাইবান্ধার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামাল হোসেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই শিশু পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের এক প্রবাসীর ছেলে। শিশুটি ৮ মে বিকেলে বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর সে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। এ ঘটনায় ৯ মে শিশুটির মা (৩৫) পলাশবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও শিশুটিকে না পেয়ে তার মা ১০ মে দুপুরে পলাশবাড়ী থানায় অপহরণের অভিযোগ মামলা করেন। মামলায় কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ১৩ মে সন্ধ্যায় পলাশবাড়ী উপজেলার তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের ধানখেত থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার বলেন, ১৩ মে রাতে পুলিশ ওই শিশুকে হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পলাশবাড়ী উপজেলার তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের বালুখোলা এলাকার সাকিব হাসান ওরফে রোমান (১৯) ও শরিফুল ইসলামকে (২০) গ্রেপ্তার করে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক জবাব না দেওয়ায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পলাশবাড়ী থানার পরিদর্শক নূর-ই-আলম সিদ্দিকী দুই আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। দুই দিনের রিমান্ডে দুজনের মধ্যে আসামি সাকিব হাসান ওরফে রোমান হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ছাড়া সাকিব হাসান গতকাল সোমবার গাইবান্ধার আমলি আদালতেও (পলাশবাড়ী) ওই শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

পুলিশ সুপার বলেন, প্রধান আসামি সাকিব হাসানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওই চার বছরের শিশুকে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। জবানবন্দিতে সাকিব বলেছেন, ৮ মে সন্ধ্যায় শিশুটিকে তিনি বাড়ির পাশে কয়েকটি কলার গাছের মধ্য নিয়ে যান। সেখানেই তিনি শিশুটিকে গলা টিপে হত্যা করেন। এরপর শিশুটির লাশ পাশের ধানখেতে ফেলে দেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, পুলিশ ওই শিশু হত্যা মামলার তদন্ত এখনো শেষ করতে পারেনি। প্রধান আসামির সঙ্গে আরও কারও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে কারণে ওই দুই আসামি সাকিব হাসান ও শরিফুল ছাড়াও সন্দেহভাজন আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের বালুখোলা এলাকার খোরশেদ আলম (২১), আসাদুজ্জামান (১৯), ছকিনা বেগম (৬০), ববিতা বেগম (৪৫), মনিরা বেগমসহ (২২) সাতজন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ইবনে মিজান, পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পরিদর্শক (নিরস্ত্র) নূর-ই–আলম সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।