দুই বছরেই দেবে গেছে সেতু
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুর চরপাড়া গ্রামে খালের ওপর ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় একটি সেতু। নির্মাণের দুই বছরেই দেবে গেছে সেতুটি। এরপর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সংস্কার করা হচ্ছে না সেতুটি। এতে সেতুর আশপাশের পাঁচটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চকমিরপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের চরপাড়া এলাকায় খালের ওপর নির্মিত সেতুটির দক্ষিণ পাশের একাংশ দেবে গেছে। দুই পাশের সংযোগ (অ্যাপ্রোচ) সড়কও পুরোপুরি ধসে গেছে। সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা ঘুরে উপজেলা সদরে যাতায়াত করছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের দুই বছর পর সেতুর দুই পাশে মাটি ফেলে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়। তবে ২০২০ সালে বন্যায় সেতুটির দক্ষিণ পাশে একাংশ দেবে যায় এবং দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটিও ধসে যায়। এর পর থেকে সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না। এরপর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটি সংস্কার বা নতুন সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে আশপাশের রামচন্দ্রপুর, বিষ্ণুপুর, আবুডাঙ্গা, হাতকড়া ও চকহরিচরণ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ ৫২ হাজার ৪৬৫ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। মেসার্স এল রহমান নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করে। ২০১৮ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। তখন সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মিত না হওয়ায় সেতুটি ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। ২০২০ সালের শুরুর দিকে দুই পাশে মাটি ফেলা হয়। এর কয়েক মাস পরই বন্যায় পানির স্রোতে সেতুটির একাংশ দেবে যায়। পানির স্রোতে ভেসে যায় দুই পাশের সংযোগ সড়ক।
সেতুটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় আশপাশের গ্রামের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। রামচন্দ্রপুর গ্রামের মুরগির খামারি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজটি (সেতু) নির্মাণের দাবি জানাইয়্যা আইছিলাম। পরে ব্রিজটি হইলেও তা ব্যবহারও করতে পারি নাই। এহন চরম কষ্টের মইধ্যে আছি।’
বিষ্ণপুর গ্রামের কফিল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিনে সেতুটি সংস্কার না করায় দুর্ভোগে রয়েছেন তাঁরা। প্রায় চার কিলোমিটার পথ ঘুরে কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করা হয়।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সঠিক পরিকল্পনা করে সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি। খালের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুটের বেশি, অথচ ৪০ ফুটের সেতু নির্মাণ করা হয়। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এবং নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে সেতু নির্মাণ করায় দুই বছরেই সেতুটি দেবে গেছে এবং সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। তিন বছর ধরে আশপাশের গ্রামের লোকজন দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করলেও কর্তৃপক্ষ সেতুটি মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করা হলে অল্প সময়ে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল উপজেলা সদর এবং আশপাশের বিভিন্ন হাটবাজারে নেওয়া যেত।
বিষয়টি নজরে আনা হলে পিআইও কর্মকর্তা মো. মমিনুর রহমান বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় সেতুটি সংস্কার বা নতুন সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই। কারণ, ওই স্থানসহ আশপাশে খালটির প্রশস্ততা বেড়েছে। ৪০ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় পড়ে না।