ভৈরবে ৩ দিনে মেঘনার ভাঙনে বিলীন ২০০ মিটার, ঝুঁকিতে বাণিজ্যকেন্দ্র ও সেতু
কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারের বাগানবাড়ি এলাকায় মেঘনা নদীর তীর তিন দিন ধরে থেমে থেমে ভাঙছে। আজ বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে প্রায় ৫০ মিটার নদীর তীর ধসে পড়েছে। গত সোমবার রাত থেকে এ ভাঙন শুরু হয়েছে। এই তিন দিনে প্রায় ২০০ মিটার তীর নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে ভৈরবের বাণিজ্যকেন্দ্র, দুটি রেলওয়ে ও একটি সড়কসেতু।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাত হোসাইন ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। ভাঙন এলাকা থেকে একটি খননযন্ত্র (ড্রেজার) জব্দ করা হয়েছে। তবে ভাঙনরোধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ সরকার এখনো নেয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি জাহিদুল হক বলেন, মেঘনা নদী ভৈরবের আশীর্বাদ। নদীর কল্যাণে ভৈরব আজ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ জনপদ। আবার এই নদী এখন ভৈরবের সবচেয়ে আতঙ্কের। সমস্যা হলো দীর্ঘ সময়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু ভাঙন থেকে ভৈরবকে রক্ষার স্থায়ী সমাধানে যাওয়া হয়নি। তাঁরা এখন কার্যকর শহর রক্ষা বাঁধ দাবি করছেন।
আজ সকালে ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি রেলডর্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলডর্ক হচ্ছে পানি থেকে ট্রলার বা নৌযান মেরামতের জন্য তীরে ওঠানোর ব্যবস্থা। রেলডর্ক নির্মাণের জন্য নদীর তীর কেটে নদীর পানি স্পর্শ করে পথ তৈরি করা হচ্ছে। মূলত ওই স্থান থেকে এবার ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন এলাকায় তৈরি করা হচ্ছিল একটি বড় ট্রলার। নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় ট্রলারটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভাঙন এলাকা থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে লঞ্চঘাটসহ ভৈরবের মূল বাণিজ্যকেন্দ্র ও শত শত বহুতল ভবন। এক প্রান্তে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দুটি রেলসেতু এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একটি সড়কসেতু, যা ভাঙনের ঝুঁকির কবলে পড়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর মেঘনা নদীর ভৈরব মোহনায় ডিপোঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। তখন বিএনডিসির সারগুদাম, তেলের যমুনা, মেঘনা ও পদ্মার ডিপো ঝুঁকিতে পড়ে। ওই ভাঙনে ২৩০ মিটার ভূমি, ২টি দোকান ও ১৩টি ঘর নদীতে বিলীন হয়। পরে জিও ব্যাগ ফেলে প্রাথমিকভাবে ভাঙন রোধ করা হয়। তখন ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের দাবি ওঠে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে ভাঙন ঠেকিয়ে দায়িত্ব শেষ করে পাউবো। সাড়ে চার মাসের ব্যবধানে আবার ভাঙন দেখা দিল।
ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে গতকাল সকালে আসেন পাউবোর কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসাইন ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আতিকুল গণি। সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, রেলডর্ক নির্মাণের প্রয়োজনে নদীর পাড় কাটা এবং পাড়–লাগোয়া স্থান থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার কারণে শুকনা মৌসুমেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার কথা ভাবা হচ্ছে।
নদীভাঙনের জন্য তীরে রেলডর্ক নির্মাণকে দায়ী করছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের ভাষ্য, যথাযথ অনুমতি না নিয়েই রেলডর্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে রেলডর্ক নিমার্ণের শ্রমিকদের সরদার মো. রানার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, প্রয়োজনের জন্য নদীর পাড় কাটা হয়েছে সত্য; তবে নদী থেকে বালু তোলা হয়নি, বরং তাঁরা মাটি ফেলেছেন।
ইউএনও শবনম শারমিন বলেন, ভাঙনের কারণে অনুমতি না নিয়েই রেলডর্ক নির্মাণ ও ট্রলার তৈরির বিষয়টি সামনে আসছে। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিকারে উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা হচ্ছে।