জলাবদ্ধতা নিয়ে সিলেটের দুই এলাকার মানুষ যেভাবে সংঘর্ষে জড়ালেন

জলাবদ্ধতার পানি নিষ্কাশনের জন্য রাস্তা কাটাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ। বুধবার বিকেলে সিলেটের সোনাতলা এলাকায়ছবি: আনিস মাহমুদ

বেশ কিছুদিন ধরে সিলেটের কুমারগাঁও-বাদাঘাট সড়কে চার লেনের কাজ করা হচ্ছিল। এ সড়কের পাশের কয়েকটি এলাকা মইয়ারচর, নয়া কুরুমখলা, নাজিরেরগাঁও ও সোনাতলা। প্রথম তিনটি এলাকা নিচু। বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। আর সোনাতলা এলাকা উঁচু।

সম্প্রতি চার লেনের কাজ শুরু হলে সড়কের পাশে নালা নির্মাণ করা হয়। নিচু তিন এলাকার বাসিন্দাদের দাবি ছিল, এলাকার পানিনিষ্কাশনের জন্য সড়কের পাশের নালার সঙ্গে এলাকার পানি নামার ব্যবস্থা করা। অপরদিকে সোনাতলা এলাকার বাসিন্দারা কিছুটা উঁচু এলাকায় বসবাস করেন। এ এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, সড়কে খুঁড়ে রাখা মাটি ফেলে রাখার ফলে বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা ও কর্দমাক্ত হয়ে যায়। এতে দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কে যাতে মাটি খুঁড়ে রাখা না হয়। মানুষের ভোগান্তি দূর করতে মাটি খোঁড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা যেন সরিয়ে নেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাটি খুঁড়ে রাখার কারণে এলাকায় প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। সোনাতলা বাজার এলাকায় খুঁড়ে রাখায় ব্যবসায়ীদের কেনাবেচা হচ্ছে না। সড়কের কাজ কুমারগাঁও থেকে সোনাতলা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে নালার কাজটি সোনাতলা এলাকা থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে ওই এলাকাগুলো। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানাতে কুমরাগাঁও-বাদাঘাট সড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সেখানে যাওয়ার পর এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা শুনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে জানান।

আরও পড়ুন

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে সোনাতলা এলাকায় সড়কের পাশের নালাটি কাটতে যান। এতে সোনাতলা এলাকার বাসিন্দারা চলাচলের সমস্যা হওয়ার কথা বলে নালা কাটতে বাধা দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতি থেকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে সোনাতলা বাজার এলাকার বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। সড়কে থাকা যানবাহন ভাঙচুর হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে বিজিবির সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাদের সমঝোতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এরই মধ্যে পুলিশ সদস্যসহ প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সড়কের নালার কাজে এক পক্ষ বাধা দিচ্ছিল, আরেক পক্ষ কাটতে চাচ্ছিল। এর মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, সংঘর্ষ থামাতে ১৪৪টি রাবার বুলেট এবং ১৪টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। তবে সংঘর্ষ চলাকালে চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন