ছাত্রশিবিরের ফিরে আসার লড়াই

চাকসু ভবনছবি: প্রথম আলো

চাকসুতে ভিপি-জিএস পদে ইসলামী ছাত্রশিবির সর্বশেষ জয় পেয়েছিল ১৯৮১ সালে। মাঝখানে ৯ বছর নির্বাচন হয়নি। পরে ১৯৯০ সালের শেষ চাকসু নির্বাচনে ‘সর্বদলীয় ঐক্য’র কাছে হেরে গিয়েছিলেন ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা। সেই হারের পরও ক্যাম্পাসে শিবিরের ‘দাপট’ ছিল। ২০১৪ সালে তাদের সরিয়ে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করে ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ)। ৩৫ বছর পর হতে যাওয়া এবারের নির্বাচন সংগঠনটির কাছে যেন ফিরে আসার লড়াই।

গত প্রায় এক দশক ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেনি ছাত্রশিবির। রাজনৈতিক পালাবদলের পর এখন আবার তারা ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ করছে। ফিরেছে ছাত্ররাজনীতিতে। চাকসু নির্বাচনেও তাদের প্রার্থীরা বেশ সরব।

নির্বাচনের প্রচারণা, ইশতেহার ও ভোটারদের সাড়া—সব মিলিয়ে এবার চাকসুতে পুরো প্যানেল জয় পাওয়ার আশা করছেন নেতা-কর্মীরা। সংগঠনটি মনে করছে, চাকসু নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ প্রস্তুতি, প্রার্থীদের পরিচিতি ও ক্যাম্পাসের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভোট দেবেন। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। আবাসিক হলগুলোতেও সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনে এটি নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে শিক্ষার্থীরা শিবিরের কার্যক্রম দেখার সুযোগ পাননি। এ কারণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, যাতে শিবিরের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডগুলো শিক্ষার্থীরা দেখেন। আশা করছি শিক্ষার্থীরা মূল্যায়ন করবেন।’

প্রস্তুতি দীর্ঘদিনের

গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের দুই সদস্যের কমিটি প্রকাশ্যে আসে। এরপর ২১ অক্টোবর প্রকাশ্যে আসেন প্রচার সম্পাদক সাইদ বিন হাবিব। চাকসুতে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন।

শাখা ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা জানান, চাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি এক বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে থাকা এসব নেতা-কর্মীর পরিচিতিই অন্যতম শক্তি। এটি প্রচারণার ক্ষেত্রে কাজে দিচ্ছে। এর বাইরে ক্যাম্পাসে দুবার নবীনবরণ, বিনা মূল্যে ইফতার আয়োজন, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সেমিনার আয়োজনও শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।

প্রচারণায় কৌশল

চাকসুতে ভোটার প্রায় ২৮ হাজার। এর মধ্যে ১৮ হাজারই অনাবাসিক। এই অনাবাসিক ভোটারদের কাছেই পৌঁছানো অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন প্রার্থীরা। ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের চারজন প্রার্থী ও একাধিক নেতা-কর্মী প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।

প্রার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইশতেহার ও প্রার্থী পরিচিতির বিভিন্ন ভিডিও তাঁরা দিচ্ছেন। তবে এটি যথেষ্ট নয়। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে তাঁরা অনুষদ ভবন, ঝুপড়ি ও ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, নগরের ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন ও শাটল ট্রেনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রতিদিনই এসব জায়গায় সংগঠনটির নেতা-কর্মী ও প্রার্থীরা ভিড় করছেন।

৯ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার

আগামী বুধবার চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হতে যাওয়া এ ভোটের আয়োজনে ক্যাম্পাসজুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। ছাত্রশিবিরের পাশাপাশি আরও ১২টি প্যানেল চাকসুতে লড়ছে। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে হবে বলে ধারণা করছেন শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রশিবির তাঁদের প্রচারণায় ৯টি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। এগুলো হলো আবাসন, যাতায়াত সংকট নিরসন, নিরাপদ ও সবুজ ক্যাম্পাস নির্মাণ, সেশনজট কমানো, আধুনিকায়ন, নারীবান্ধব ক্যাম্পাস, শিক্ষা, গবেষণা ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণ ও জনকল্যাণ কার্যক্রম।