লাশ ভেসে চলে গেছে ভারতে, দেড় মাসেও ফিরে পাননি স্বজনেরা

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় আত্রাই নদে নিখোঁজ অবিনাশের লাশের অপেক্ষায় স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনেরা
ছবি: প্রথম আলো

বাবা অবিনাশ চন্দ্র দাসের (৭২) মৃত্যুর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন তাঁর সন্তানেরা। পানিতে ভেসে থাকা লাশের ছবিও দেখেছেন। কিন্তু সেই লাশ পাচ্ছেন না। লাশ পেতে ঘুরছেন সীমান্তে। বাবার লাশের অপেক্ষায় কেটে গেছে দেড় মাসের বেশি সময়। লাশের অপেক্ষায় আছেন স্বজন-প্রতিবেশীরাও। সবারই প্রশ্ন, আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে লাশের জন্য?

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ঢাকইল ঘনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অবিনাশ। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, গত ৩১ আগস্ট সকালে বাড়ির পাশে আত্রাই নদের বৈদ্যনাথ ঘাটে তিনি ঝিনুক কুড়াতে গিয়েছিলেন। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও তিনি বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। পরদিন রংপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের একটি ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে খোঁজাখুঁজি করে তাঁর কোনো হদিস পায়নি। দুই দিন পর পরিবারের লোকজন ভারতে থাকা তাঁদের আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে জানতে পারেন, ভারতীয় আমইল এলাকায় একটি লাশ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে লাশের একটি ছবি পাঠানো হয়। ওই ছবি দেখে তাঁরা শনাক্ত করেন, লাশটি অবিনাশের।

অবিনাশের দুই ছেলে যোগেন চন্দ্র দাস ও হরিপদ চন্দ্র দাস আর মেয়ে তুলসী দাস। যোগেন বলেন, ‘দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বাবার লাশের জন্য ঘুরতেছি। বড়গ্রাম ক্যাম্পের (বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির ক্যাম্প) পাশে ১৫ দিন বিছানা-বালিশ নিয়ে ছিলাম। মণিপুর, মোহনপুর সব ক্যাম্পেই যোগাযোগ করেছি। সবাই বিষয়টি জানেন। কয়েকবার বিএসএফের (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। কোনো সুরাহা হয়নি। ভারতে থাকা আমাদের আত্মীয়রা ছবি পাঠিয়েছেন। বাবার গলায় তুলসীর মালা, কোমরে পইতা—সবই আছে।’

মেয়ে তুলসী বলেন, ‘আমার বাবার যদি হাড্ডি দুইখানও থাকে, তা-ও নিয়ে আসি দেন। এত দিন ধরি ঘুরোছি, কেউ কোনো খোঁজ দিবার পারোছে না। হামাক খালি বাবার শ্রাদ্ধ করির সুযোগ করি দেন।’

এ বিষয়ে দিনাজপুর ২৯ বিজিবি সেক্টরের আওতাধীন বড়গ্রাম ক্যাম্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সুবেদার সফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তাঁরা জানেন। কয়েকবার বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকও করেছেন। শিগগিরই বিষয়টির সুরাহা করার চেষ্টা করছেন।

চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম শরীফুল হক বলেন, ‘লাশ যেহেতু ভাসতে ভাসতে ভারতীয় সীমান্তের ভেতরে চলে গেছে, তাই লাশ ফিরে পেতে একটু সময় লাগছে।’