এবার ফুল বিক্রির ধুম নেই খুলনার শান্তিধামে

আজ পয়লা ফাল্গুন, আবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। ফাল্গুনী সাজের জন্য ফুল নিতে ফুলের দোকানে এক তরুণী। গতকাল খুলনা নগরের ফুল মার্কেটে
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা/ খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি/ দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার/ ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!/ বাজারে বিকায় ফল তণ্ডুল/ সে শুধু মেটায় দেহের ক্ষুধা,/ হৃদয়-প্রাণের ক্ষুধা নাশে ফুল/ দুনিয়ার মাঝে সেই তো সুধা!’

ফুল নিয়ে কবিতাটি লিখেছিলেন সতেন্দ্রনাথ দত্ত। তবে সেই ফুল কিনতেই হিমশিম খাচ্ছেন খুলনার সাধারণ মানুষ। ক্রেতা নেই ফুলের দোকানে। যে দুই একটি ফুল বিক্রি হচ্ছে, তা–ও বেশ দরদাম করে। একটি বা দুটি ফুল কিনেই সন্তুষ্ট থাকছেন ক্রেতারাও। পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগের দিন গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এমন চিত্র দেখা গেছে খুলনা নগরের শান্তিধাম মোড় এলাকায় অবস্থিত ফুল মার্কেটে।

খুলনা নগরের একমাত্র বড় এই ফুল মার্কেটের বিক্রেতারা বলছেন, অন্য সময়ের তুলনায় ফুল বিক্রি হচ্ছে অর্ধেকেরও কম। ক্রেতা নেই বললেই চলে। কিন্তু অন্যান্য বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের আগের রাতে ফুল বিক্রির ধুম পড়ত। ক্রেতা সামাল দিতেই হিমশিম খেতেন তাঁরা। তাঁরা মনে করছেন, জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে হয়ত মানুষের হাতে টাকা কমে গেছে, আর এতে ফুলের চাহিদা কমেছে।

সন্ধ্যার পর ওই মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতার আশায় অধিকাংশ দোকানের সামনের অংশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে হরেক রকমের ফুল। গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধার সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে বাজারের সর্বত্রই। ছোট ছোট তোড়া আর মাথার মুকুট সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানে। এসব তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানের কর্মচারীরা। তবে যাঁদের জন্য এত আয়োজন, দেখা নেই সেই ক্রেতাদের। অধিকাংশ দোকানদারই বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। দুই-একজন ক্রেতা এলেই যেন স্বস্তি পাচ্ছেন তাঁরা। ফুল বিক্রি করতে মনোযোগী হচ্ছেন। তবে ক্রেতারাও যেন ওই সুযোগ নিতে চাইছেন। বিভিন্ন দোকান ঘুরে বেশ দরদাম করে ফুল কিনছেন তাঁরা।

খুলনার ফুলের বাজারে এবার ক্রেতার আনাগোনা কম বলে জানান বিক্রেতারা। গতকাল সন্ধ্যায় নগরের শান্তিধাম মোড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

দোকানগুলোয় মানের ভিত্তিতে গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। আর জারবেরা ও রজনীগন্ধা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকায়। দোকানদাররা জানান, ভালোবাসা দিবসে সাধারণত এসব ফুলের চাহিদা বেশি থাকে।

ওই বাজারের পুষ্পমালা দোকানের মালিক মো. মহিউদ্দিন বলেন, পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গত দুই দিনে এক লাখ টাকার বেশি ফুল আনা হয়েছে। সাধারণত অন্যান্য বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকেই ক্রেতার চাপ থাকে, তবে এবার তার কিছুই নেই। মনে হচ্ছে নিত্যপণ্যের দামের কাছে মানুষের ভালোবাসাও চাপা পড়ে গেছে। অর্ধেক ফুল বিক্রি হবে কি না, সন্দেহ রয়েছে।

ওই দোকানের কর্মচারী অনাদী গাইন বলেন, প্রতিবছর ‘রোজ ডে’তে ব্যাপক গোলাপ বিক্রি হয়। তবে এ বছর কেন জানি তুলনামূলক কম ফুল বিক্রি হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এবারের ভালোবাসা দিবসেও তা–ই হবে।

পাশের দোকানের নাম ‘জুঁইচামেলী গার্ডেন’। দোকানের সামনের অংশে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে হরেক রকমের গোলাপ। সামনে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কয়েকজন কর্মচারী। ওই দোকানের কর্মচারী সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ক্রেতা খুবই কম। জিনিসপত্রের যেভাবে দাম বেড়েছে তাতে ফুলের দাম আরও বেশি বাড়ার কথা কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি। তারপরও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।

আশপাশের আরও কয়েকটি দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, গতকাল ফুল কম বিক্রি হলেও আজ মঙ্গলবার বেশি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে আগ থেকে তোড়া ও মুকুট তৈরি করে কাজ গুছিয়ে রাখছেন। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের দাম দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এবার ক্রেতাদের চাহিদা কম থাকায় কেউ ফুলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়াতে পারছেন না।

ওই বাজারে বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে গোলাপ কেনার চেষ্টা করছিলেন দুই তরুণী। এ সময় কথা হল তাঁরা বলেন, স্বাভাবিক দিনের তুলনায় ফুলের দাম বেশি। কোন দোকানে একটু কম দামে ফুল পাওয়া যাবে, সেই চেষ্টা করছেন।