মাগুরা সদর হাসপাতাল
ভবনে উঠতে রোগীর ভোগান্তি
জেনারেটর চালু ও র্যাম্প না থাকায় অনেক জটিল ও জরুরি রোগীকে ওপরতলায় যেতে বিদ্যুৎ আসার অপেক্ষায় থাকতে হয়।
নতুন ও পুরোনো দুটি ভবন মিলে এই হাসপাতালের অবকাঠামো। ১০০ শয্যার পুরোনো ভবনের সঙ্গে রয়েছে ১৫০ শয্যার নতুন ভবন।
চারতলাবিশিষ্ট পুরোনো ভবনে রোগীর শয্যা গড়িয়ে নিতে বা হুইলচেয়ারের যাতায়াতের জন্য র্যাম্প রয়েছে। তবে ছয়তলা নতুন ভবনে এ ব্যবস্থা নেই। এজন্যই ভোগান্তি।
মাগুরায় লোডশেডিংয়ের কারণে ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে বড় ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রায়ই লিফটে আটকা পড়ছেন রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও রোগীর স্বজনেরা। জেনারেটর চালু ও র্যাম্প (সিঁড়ির পরিবর্তে একতলা থেকে অন্যতলায় যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত ঢালু পথ) না থাকায় অনেক জটিল ও জরুরি রোগীকে ওপরতলায় যেতে বিদ্যুৎ আসার অপেক্ষায় থাকতে হয়।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালের নতুন ভবনের দুটি লিফট বন্ধ রয়েছে। এ সময় রোগীর স্বজনেরা সিঁড়ি বেয়ে ওপরের বিভিন্ন তলায় যাচ্ছেন। তবে জটিল রোগীদের জন্য এমন পরিস্থিতি ভীষণ আতঙ্ক ও যন্ত্রণার। কয়েকজন ভুক্তভোগী ও হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেল।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কলামখালী গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার এ হাসপাতালে আসেন রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) রোগী। তিনি বলেন, ‘ফরিদপুর থেকে ডাক্তার দেখায়ে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। সে সময় বিদ্যুৎ ছিল না। কিন্তু আমার রোগীর এমন পরিস্থিতি ছিল না সিঁড়ি বেয়ে তাঁকে ছয়তলায় ওঠাব। প্রায় এক ঘণ্টা শুধু আল্লাহকে ডেকেছি।’
চার দিন ধরে মহিলা অর্থোপেডিকস বিভাগে ভর্তি রয়েছেন মাগুরা শহরের হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা কামরুল হাসানের মা। সত্তরোর্ধ্ব এই নারীর পা ভেঙে গেছে, রয়েছে হৃদ্রোগের সমস্যাও। কামরুল হাসান বলেন, ‘হৃদ্রোগের সমস্যার কারণে মাকে নিয়ে প্রায়ই হাসপাতালে আসতে হয়। লিফট ছাড়া রোগীদের ওঠানামার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে এলে রীতিমতো আতঙ্কে থাকি। কারণ, একবার তাঁকে (মা) নিয়ে বিপদে পড়েছি। এ কারণে ছয়তলায় কেবিনে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও যাচ্ছি না। এটা হাসপাতালে প্রত্যেক রোগীর জন্যই বড় ভয়ের বিষয়।’
হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন ও পুরোনো দুটি ভবন মিলে এই হাসপাতালের অবকাঠামো। ১০০ শয্যার পুরোনো ভবনের সঙ্গে ২০১৭ সালে ১৫০ শয্যার নতুন ভবন যুক্ত হয়। চারতলাবিশিষ্ট পুরোনো ভবনে রোগীর শয্যা গড়িয়ে নিতে বা হুইলচেয়ারের যাতায়াতের জন্য র্যাম্প রয়েছে। তবে ছয়তলা নতুন ভবনে এ ব্যবস্থা নেই। নতুন ভবনে পুরুষ মেডিসিন কেবিন, মহিলা মেডিসিন, করোনা ইউনিট, শিশু, মহিলা অর্থোপেডিকস, মহিলা সার্জারি, প্রশাসনিক শাখা, প্যাথলজি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কক্ষ রয়েছে।
পুরোনো ভবনে র্যাম্প ও বিদ্যুতের দুই লাইনের সংযোগ থাকায় সমস্যা তৈরি হয়নি। তবে নতুন ভবনে এটাই এখন বড় সংকট। অনেক সময় জটিল রোগীদের হুইলচেয়ার ও শয্যা উঁচু করে ঝুঁকি নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তুলতে হয়।
লিফট অপারেটর সাবুর আলী বলেন, দুটি লিফটের একটি প্রায় এক মাস নষ্ট হয়ে আছে। দিনে দুই থেকে তিনবার লিফট চলন্ত অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে যায়। তাঁরা তিনজন পালা করে প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করেন। লিফটে কেউ আটকা পড়লে তাঁরা এসে উদ্ধার করেন।
সাবুর আলী আরও বলেন, ‘অনেক সময় দোতলার মাঝামাঝি লিফট আটকে যায়। তখন মানুষকে উদ্ধার করতে আমাদের ঝুঁকি নিতে হয়। গত মাসের শেষ দিকে একবার পাঁচজন আধা ঘণ্টার বেশি আটকা ছিলেন। তখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে একটি জেনারেটর রয়েছে, যেটা ২০০২ সালের দিকে আনার পর থেকেই বেশির ভাগ সময় বন্ধ রয়েছে। জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা বিকাশ কুমার শিকদার বলেন, ‘হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের বিকল্প নেই। লিফটে প্রায়ই মানুষ আটকা পড়ছে।
একটা জেনারেটর হাসপাতালে আছে, তবে তা জন্মলগ্ন থেকেই অচল। কারণ, জ্বালানির বাজেট নেই। এটার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে হাসপাতালে দুই ফেজের লাইন করে দেওয়া, সেটার দাবিই আমরা করেছি।’
হাসপাতাল ভবনে র্যাম্প না থাকা নকশায় কোনো ত্রুটি কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মাগুরা গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রসেনজিৎ পাল বলেন, ‘আশপাশের জেলায়ও একই ধরনের নকশায় হাসপাতাল ভবন নির্মাণ হয়েছে।
গত সপ্তাহে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিদ্যুতের সংকট সমাধানে দুই ফেজের লাইন দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বরাদ্দ পাওয়ার বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।’