বাহক মারফত পাঠানো হলো লিখিত অভিযোগ, গ্রহণ করল না পুলিশ

নোয়াখালী জেলার মানচিত্র

অনুমোদনহীন বিদ্যুতের লাইন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) একজন প্রকৌশলীকে মারধর ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় থানায় বাহক মারফত লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোর কাছে এ দাবি করেছেন আহত প্রকৌশলী।

হামলার শিকার ওই প্রকৌশলী ও তাঁর পরিবার ভয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানালেন। তবে কোম্পানীগঞ্জ থানা-পুলিশ বলছে, তাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগই নিয়ে আসেননি।

হামলার শিকার ওই প্রকৌশলীর নাম সাইফুল ইসলাম। তিনি বিউবোর কোম্পানীগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর বিউবোর কোম্পানীগঞ্জ কার্যালয়ের লাইনম্যান মো. মামুন লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় পরিদর্শকের (তদন্ত) কাছে যান। পরিদর্শক তাঁকে বলেন, ডাক্তারি সনদসহ অভিযোগকারীকে থানায় আসতে হবে। তখন তাঁর (সাইফুল) শারীরিক অবস্থার কথা জানালে পরিদর্শক বলেন, তাহলে ডাক্তারি সনদ নিয়ে আসতে হবে।

এ বিষয়ে পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর কাছে অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে যাবে, আমার কাছে কেন আসবে?’ তিনি বুধবার সন্ধ্যায় থানায় ছিলেন না।

ওসি মো. সাদেকুর রহমান জানান, বুধবার সন্ধ্যা থেকে তিনি থানায় ছিলেন। তাঁর কাছে কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেননি। তিনি বলেন, ‘এলাকার সবাই বিষয়টি জানেন, এ ঘটনায় অভিযোগ দিলে আমি নেব না, পাগল? আমার কাছে আসেননি। আমি তদন্তকে (পরিদর্শককে) জিজ্ঞেস করব।’

এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যনিগো বাড়ির দরজায় অনুমোদনহীন একটি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের কাজে ঠিকাদারের লোকজনকে বাধা দেন বিউবোর কোম্পানীগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম। এ সময় লাইন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় যুবলীগের মো. খোকন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিপন, টিপুসহ কয়েকজন তাঁকে মারধর করেন।

একটু পর তাঁকে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাড়ির সামনের একটি দোকানসংলগ্ন ঘরে আটকে দ্বিতীয় দফায় মারধর করা হয়। সেখানে সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই শাহদাত হোসেনও তাঁকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁর মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে আটকে রাখেন। পরে রাত আটটার দিকে ফেনী থেকে বিউবোর লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। কোম্পানীগঞ্জ বিউবোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয় সংস্থাটির ফেনী কার্যালয় থেকে।

সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাঁর ওপর নির্মম হামলা চালানো হলেও তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভয়ে তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। তিন সদস্যের যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন রয়েছেন, যিনি তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় নেপথ্যে থাকতে পারেন বলে তাঁর সন্দেহ। কারণ, যে প্রকল্পের অধীনে নতুন বিদ্যুৎ লাইনটি নির্মাণের জন্য বিউবোর ঠিকাদারের লোকজন এসেছিলেন, তিনি ওই প্রকল্পের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন।

আরও পড়ুন

সাইফুল আরও বলেন, অবৈধ লাইন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্যরা এখন উঠেপড়ে লেগেছেন তাঁকে ফাঁসানোর জন্য। তাঁরা এখন হামলাকারীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা কল্পকাহিনি প্রচার করছেন। অথচ তিনি আবাসিক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের (একই নামে নাম) নির্দেশে অনুমোদনহীন অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ বন্ধ করতে গিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে ফেনী বিউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আ স ম রেজাউন নবী বলেন, তাঁর (সাইফুল) অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন তিনি কেন ওই সব কাজ করতে যাবেন। ঘটনা জানার পর বিউবোর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক যা যা করার দরকার ছিল সবই তিনি করেছেন। তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও বিষয়টির খোঁজখবর নিচ্ছেন। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রকৌশলী সাইফুল বলেন, তিনি ও তাঁর পরিবার ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার সনদ নিয়ে আজ আবার অভিযোগ থানায় পাঠাবেন। এবারও মামলা নেওয়া না হলে তিনি আদালতের আশ্রয় নেবেন।