সেই শ্রাবন্তী ও আনিকা এখন অন্যের বাল্যবিবাহ ঠেকায়

শ্রাবন্তী সুলতানা ও আনিকা খাতুন
ছবি: সংগৃহীত

‘সাহসী কন্যা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শ্রাবন্তী সুলতানার (বর্ষা) কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চুয়াডাঙ্গা শহরের ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী শ্রাবন্তী থানায় হাজির হয়ে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে প্রশংসিত হয়। শহরতলী দৌলাতদিয়াড়ের বাসিন্দা শ্রাবন্তী বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। এখন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছে সে।

দামুড়হুদার বেগোপাড়ার বাসিন্দা আনিকা খাতুন। ২০১৮ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় পরিবার তার বিয়ে ঠিক করে। সে নিজের বিয়ে ঠেকিয়েছিল। আনিকা এ বছর চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি আনিকা পাঁচ বছর এবং শ্রাবন্তী তিন বছর ধরে একের পর এক বাল্যবিবাহ ঠেকাচ্ছে। এই দুই কিশোরীর সরাসরি ভূমিকার কারণে অর্ধশতাধিক কিশোরী বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেয়েছে। আনিকার সরাসরি ভূমিকার কারণে অন্তত ৪৫টি এবং  শ্রাবন্তীর চেষ্টায় অন্তত সাতটি বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়েছে।

আনিকার মতে, বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে দেওয়ার পরও পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক চাপের কারণে বেশ কয়েকজনকে পরে কম বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। কয়েকজনের বিয়ে বিচ্ছেদও হয়ে গেছে।

শ্রাবন্তী বলে, ‘যাদের বাল্যবিবাহ হয়েছে, তারা কেউ সুখে-শান্তিতে নেই। আমার সাবেক সহপাঠীদের অনেকেই পারিবারিক চাপে বাল্যবিবাহ করলেও মানসিকভাবে অস্বস্তিতে আছে।’

শ্রাবন্তী সুলতানা
ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার নাগরিক সংগঠন জেলা লোকমোর্চার সহসভাপতি তানজিলা মিনি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ২০ বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি বলেন, বাল্যবিবাহের পেছনে অনেক কারণ আছে। তবে এই জেলায় আর্থিক অনটনের কারণে বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে বেশি। এ ছাড়া নিরাপত্তা এবং পারিপার্শ্বিক ও পারিবারিক চাপেও একের পর এক বাল্যবিবাহ হচ্ছে। বাল্যবিবাহ রোধে আনিকা ও শ্রাবন্তীর ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

শ্রাবন্তীর মা বিউটি খাতুন মুড়ি ও সেমাই কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালান। আর্থিক অনটনের পাশাপাশি নিরাপত্তার কথা ভেবে মেয়েকে কম বয়সেই বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন শ্রাবন্তী বিয়ে করতে চায়নি। সদর থানার তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ মহসীনের সহযোগিতায় নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছিল সে। জেলা প্রশাসন ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর তাকে সংবর্ধনা দিয়ে ‘সাহসী কন্যা’ উপাধি দেয়। লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সহযোগিতার হাত বাড়ায়। শ্রাবন্তী ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। পড়াশোনা শেষ করে সে বিসিএস ক্যাডার হতে চায়।

অন্যের বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ করে আনিকা খাতুন
ছবি: সংগৃহীত

আনিকার মতে, শুধু নিজের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করে এটা স্থায়ীভাবে রোধ করা যাবে না। এ জন্য সবার সহযোগিতা লাগবে। সে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আবার কখনো জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর–৯৯৯–এ কল করে বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে।