বরিশালে দেয়ালধসে দুজন ও গাছের ডাল পড়ে একজনের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গত রোববার সন্ধ্যায় বরিশাল নগরের বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। নগরের পলাশপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বরিশাল নগরে একটি ভবনের দেয়ালধসে দুজন ও বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গাছের ডাল পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার মধ্যরাত থেকে বরিশাল নগরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ–সংযোগ চালু হয়নি। নগরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।

আজ সোমবার ভোরে নগরের রূপাতলী এলাকায় লিলি পেট্রলপাম্পের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন নগরের রূপাতলী এলাকার লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মী মোকসেদুর রহমান। একই হোটেলের আহত আরেক কর্মী শাকিব হোসেনকে বরিশাল শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিচুল হক। আর বাকেরগঞ্জ উপজেলার চর দাড়িয়াল গ্রামে নিহত ব্যক্তির নাম জালাল শিকদার (৫৫)।

বরিশাল নগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ বলেন, ভোরে লোকমান, মোকসেদুর ও শাকিব টিনশেড হোটেল ঘরের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে পাশের তিনতলা ভবনের ছাদের দেয়ালের কিছু অংশ ধসে হোটেলের টিনের চালে ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে একজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

নগরে নানা ভোগান্তি

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল পটুয়াখালীর উপকূলে আঘাত হানার পর মধ্যরাত থেকে বরিশালজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। দমকা হাওয়ায় গাছপালা উপড়ে পড়াসহ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত সোয়া দুইটায় বরিশাল নগরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুরো নগর অন্ধকারে ডুবে আছে। ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নগরের রাস্তাঘাটে পানি থই থই করছে। বেশির ভাগ এলাকার বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে যাওযায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো বাসিন্দা।

আজ সন্ধ্যা সোয়া সাতটা পর্যন্ত বরিশালে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ের তীব্রতায় আজ সকাল সাড়ে নয়টার পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্কে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় নগরে দেখা দিয়েছে পানিসংকট। নগরের চৌমাথা এলাকার বাসিন্দা আমির হোসাইন বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় সকাল থেকে ট্যাংকে পানি ওঠাতে পারিনি। তাই দৈনন্দিন কাজ সবকিছু ব্যাহত হচ্ছে। মোবাইলের নেটওয়ার্কও নেই। ফলে গ্রামের বাড়িতে থাকা স্বজনদের খোঁজও নিতে পারছি না’।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টির মধ্য দিয়েই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কেটে যাবে। রোববার রাতেই বরিশাল স্থলভাগে ঢুকে পড়ে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৮ কিলোমিটার। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় টানা ও ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

বেড়েছে নদ-নদীর পানি

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নদ-নদীর পানি আজও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চলসহ নদীর তীরবর্তী এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিভাগের সব কটি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়–পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি ও অন্য কাজ ব্যাহত হচ্ছে।