দুই ঘণ্টার পাহাড়ি পথ হেঁটে বিদ্যালয়ে যায় ১৩ গ্রামের শিক্ষার্থী

বিদ্যালয় ছুটির পর জমির আল দিয়ে হেঁটে বাড়িতে ফিরছে শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার বিকেলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বোয়ালখালী বিলে
ছবি: প্রথম আলো

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার লম্বাছড়া এলাকার আশপাশে ১৩টি গ্রামে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। ফলে এসব গ্রামের শিশুদের প্রাথমিকের পর দুই ঘণ্টার পাহাড়ি পথ হেঁটে ছোট মেরুং উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। বর্ষাকালে বন্ধ থাকে বিদ্যালয়ে যাতায়াত।

শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবে লম্বাছড়া এলাকায় একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ জন্য জমি দিতেও প্রস্তুত আছেন তাঁরা। সেখানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে দুর্গম লম্বাছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা দল বেঁধে সারিবদ্ধভাবে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। দশম শ্রেণির সুস্মিতা ত্রিপুরা বলে, ‘প্রতিদিন সকাল সাতটায় বের হয়ে সবাই একসঙ্গে বিদ্যালয়ে যাই। ছোট মেরুং উচ্চবিদ্যালয়ে যেতে হলে আমাদের দুই ঘণ্টা হাঁটতে হয়। বিদ্যালয় ছুটির পর বিকেল পাঁচটায় আবার দল বেঁধে গ্রামে ফিরে আসি।’

বর্ষা এলে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না বলে জানাল অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নীরব ত্রিপুরা। সে বলে, ‘আমরা গ্রামের কেউ বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে যাই না। আমাদের গ্রামে একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলে অনেক ভালো হবে।’

লম্বাছড়া এলাকার অনিল ত্রিপুরা ষষ্ঠ শ্রেণির পর পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। সে বলে, ‘অনেক দূরে বিদ্যালয়। প্রতিদিন হেঁটে যেতে অনেক কষ্ট লাগে। তাই এ বছর থেকে আর পড়াশোনা করছি না।’

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ধীননাথ ত্রিপুরা, রাবিনা ত্রিপুরা এবং সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নরমময় ত্রিপুরা জানায়, জঙ্গল পরিবেষ্টিত পাহাড়ি পথ একা হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে তাদের ভয় লাগে। তাই সবাই একসঙ্গে বিদ্যালয়ে যায়।

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোনা মিত্র চাকমা বলেন, লম্বাছড়া এলাকার আশপাশে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তিনটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোনো মাধ্যমিক বা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক সমাপনী শেষ করার পর অনেক দূরের বিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হয়। গ্রামের মধ্যে একটি বিদ্যালয় হলে তাদের কষ্ট লাগব হবে।

লম্বাছড়া চাকমা পাড়া গ্রামের প্রধান (করবারি) সঞ্চয় বিকাশ চাকমা বলেন, লম্বাছড়া ত্রিপুরা পাড়া, লম্বাছড়া চাকমা পাড়া, জালবান্দা, রাইন্যা পাড়া, বাঁশিরাম কারবারি পাড়া, ১ নম্বর যৌথ খামার, ২ নম্বর যৌথ, খামার, ৩ নম্বর যৌথ খামার, ভুতাছড়া, রশিক পাড়া, জুরজুরি পাড়া, বাজেইছড়ি, প্রতিভা পাড়াসহ এ এলাকায় ১৩টি গ্রামে কয়েক শ পরিবারের বসবাস। গ্রামগুলো থেকে কয়েক শ শিশু দুই ঘণ্টা পথ হেঁটে উচ্চবিদ্যালয়ে যায়। ১৩টি গ্রামের আশপাশে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় গ্রামের শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

লম্বাছড়া গ্রামের বাসিন্দা নয়নময় ত্রিপুরা এখন খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘লম্বাছড়া গ্রামে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলে আমি বিদ্যালয়ের জন্য আমার মায়ের নামের ৪০ শতক জমি দান করব। গ্রামে একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খুবই প্রয়োজন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, প্রাথমিকের পর ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের অনেক দূরের বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা ঝরেও পড়ছে বলে জানতে পেরেছেন। লম্বাছড়া এলাকায় একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে।