পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে সোয়া পাঁচ কোটি টাকার বেশি, এখনো গণনা বাকি

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে পাওয়া টাকা দিনভর গুনেও শেষ করা যায়নি
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক খুলে পাওয়া টাকা দিনভর গুনেও শেষ করা যায়নি। তবে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রেকর্ড সোয়া পাঁচ কোটি টাকার বেশি গণনা হয়েছে। বাকি টাকা গুনতে আরও দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগবে। টাকা ছাড়াও দানসিন্দুকে মিলেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার।

চার মাসের মাথায় আজ সকাল আটটায় দানসিন্দুকগুলো খুলে ১৯ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। মাঝে রমজান ও ঈদুল ফিতর থাকায় এবার এত টাকা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া।

আজ সন্ধ্যা ৭টায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সম্পূর্ণ টাকা গুনতে আরও দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে। কারণ, এখন ছোট নোটগুলো গণনা করা হচ্ছে। গণনা শেষে বলা যাবে, মোট কত টাকা হয়েছে। তবে এবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি পাগলা মসজিদের ৮টি দানসিন্দুকে ১৬ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। সেবার দিনভর গুনে পাওয়া গিয়েছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকাসহ বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।

জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরের ঐতিহাসিক মসজিদটিতে লোহার আটটি দানসিন্দুক রয়েছে। তিন মাস পরপর এসব সিন্দুক খোলার কথা। তবে পবিত্র রমজান ও ঈদের কারণে এবার খোলা হয়েছে চার মাসের মাথায়।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানসিন্দুক খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজ এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আজ সকাল আটটায় সিন্দুকগুলো খোলা হয়। প্রথমে টাকাগুলো সিন্দুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মেঝেতে ঢেলে গণনা শুরু করা হয়। মাদ্রাসার শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী, ব্যাংকের অর্ধশত কর্মী, মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলিয়ে দুই শতাধিক লোক টাকা গণনায় অংশ নেন।

আরও পড়ুন
চার মাসের মাথায় আজ সকাল আটটায় দানসিন্দুকগুলো খুলে ১৯ বস্তা টাকা পাওয়া যায়
ছবি: প্রথম আলো

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম, শেখ জাবের আহমেদ ও সাদিয়া আফরিন, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি গড়ে ওঠে। কথিত আছে, খাসনিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করে থাকেন। মানুষ টাকাপয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার দান করেন। এ ছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসও মসজিদটিতে দান করা হয়।

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তাও করা হয়। এ ছাড়া মসজিদের জমানো টাকা দিয়ে এখানে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অর্ধলাখ মুসল্লি যাতে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন, এ রকম আকর্ষণীয় একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১২০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।