১২ দিন পর নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন, রিমান্ড শেষে ৪ আসামি কারাগারে

ধর্ষণপ্রতীকী ছবি

কুমিল্লার মুরাদনগরে নির্যাতনের শিকার সেই নারীর (২৫) ডাক্তারি পরীক্ষা (ফরেনসিক) সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমে রাজি না হলেও ঘটনার ১২ দিন পর স্বেচ্ছায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এদিকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় করা মামলার চার আসামিকে তিন দিনের রিমান্ড শুনানি শেষে আজ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গত ২৬ জুন রাতে ওই নারী নির্যাতনের শিকার হন। এ ঘটনায় ২৭ জুন মুরাদনগর থানায় ধর্ষণের মামলা করেন ওই নারী। পরদিন ২৮ জুন ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগমুহূর্তে হঠাৎ তিনি ডাক্তারি পরীক্ষা করাবেন না বলে জানান। পরে পরীক্ষা ছাড়াই পুলিশ সদস্যরা তাঁকে নিয়ে মুরাদনগরে ফিরে আসেন। পরে স্বেচ্ছায় আজ তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, আইনানুযায়ী ভুক্তভোগী নারী ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে না চাইলে তাঁকে বাধ্য করার সুযোগ নেই। এ জন্য ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা নিয়েও পরীক্ষা ছাড়াই ফেরত আনা হয়। তিনি এখন তাঁর বাবার বাড়িতে থাকছেন না। নিজের হেফাজতে অন্যত্র থাকলেও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। ইতিমধ্যে তিনি ডাক্তারি পরীক্ষার গুরুত্ব বুঝে স্বেচ্ছায় রাজি হন। আজ দুপুরে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এটি মামলার তদন্তের জন্য ইতিবাচক।

চার আসামি কারাগারে

এদিকে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় চার আসামিকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে দুপুরে কুমিল্লার আদালতে হাজির করা হয়। গত শনিবার কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের মুরাদনগর থানায় আনা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে দুজন পুলিশকে আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছিল।

তবে আদালতে বিচারকের সামনে হাজির হওয়ার পর তাঁরা স্বীকারোক্তি দেননি। পরে চারজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ আলী ওরফে সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক। এর মধ্যে মোহাম্মদ আলী নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ওয়ার্ড কমিটির সাবেক নেতা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো পুলিশ যাচাই-বাছাই করছে। চার আসামির মধ্যে সুমন ও রমজান স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতে হাজির করার পর তাঁরা জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

এদিকে ভিডিও ছড়ানোর ‘নেপথ্যের ব্যক্তি’ হিসেবে গ্রেপ্তার শাহ পরানের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। কাল বুধবার আবেদনের শুনানি হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। শাহ পরান ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি ফজর আলীর ছোট ভাই। গত বৃহস্পতিবার জেলার বুড়িচং উপজেলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁকে মুরাদনগর থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। রোববার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।

প্রধান আসামি পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন

এদিকে ধর্ষণের মামলার একমাত্র আসামি ফজর আলী পুলিশ পাহারায় এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার সময় স্থানীয় কিছু যুবক পিটিয়ে তাঁর হাত-পা ভেঙে দেয়। পুলিশ ২৯ জুন ভোরে ঢাকা থেকে ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করে।

জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, ফজর আলীর অবস্থা এখনো তেমন উন্নতির দিকে যায়নি। তাঁর অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছাড়পত্র দিতে অন্তত দুই মাস সময় লাগতে পারে।

গত ২৬ জুন দিবাগত রাতে উপজেলার একটি গ্রামে সুদের বিনিময়ে দেওয়া টাকার খোঁজ নিতে গিয়ে বাড়ি ফাঁকা পেয়ে ফজর আলী নামের ওই ব্যক্তি প্রথমে ভুক্তভোগীর বাবার টিনের ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি টের পেয়ে ফজর আলীর পাশাপাশি ভুক্তভোগী নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে ২৭ জুন এবং ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে ২৯ জুন থানায় দুটি মামলা করেন ভুক্তভোগী।