ইকবাল কবির জাহিদ

আপনারা ভৈরব নদের ওপর তিনটি সেতু পুনর্নির্মাণের দাবি জানাচ্ছেন কেন?

ইকবাল কবির জাহিদ: নদ-নদীর ওপর সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি মানদণ্ড আছে। সেতু নির্মাণ করতে হলে নৌযান চলাচলের নিশ্চয়তার জন্য বিআইডব্লিউটিএ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে যশোর অঞ্চলের সাতটি নদ-নদীর ওপর ১৩টি কম উচ্চতার সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে ভৈরব নদের ওপর তিনটি সেতু পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। দুই-তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সরকারের দুটি সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সেতুগুলো নির্মাণ করছে। সংস্থা দুটি বিআইডব্লিউটিএ থেকে ছাড়পত্র নেয়নি।

নদীগুলোর কোনোটির ক্ষেত্রে সেতুর উচ্চতা হওয়ার কথা পানির স্তর থেকে গার্ডারের নিচ পর্যন্ত ১৬ ফুট, কোনোটির ২৫ ফুট। কিন্তু নির্মাণাধীন সব কটি সেতুর উচ্চতা হচ্ছে ৪ দশমিক ৫৯ ফুট থেকে ১১ দশমিক ৫০ ফুট পর্যন্ত। বাংলাদেশ নদী কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে এসব সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি জানানোর পরও তা আমলে নেওয়া হয়নি। সেতুগুলো এতটাই নিচু করে নির্মাণ করা হচ্ছে যে বর্ষাকালে কোনো নৌযান সেগুলোর নিচ দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। নৌপথগুলো কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়বে। এই কারণে আমরা সেতুগুলোর নির্মাণকাজ বন্ধ করে যথাযথ মানদণ্ড অনুযায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি।

নীতিমালা অনুযায়ী সেতু নির্মাণ করলে কী কী সুবিধা হবে?

ইকবাল কবির জাহিদ: এর আগে ভৈরব নদের ওপর ৫১টি অপরিকল্পিত সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করে নদটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। এসব অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ করেছে এলজিইডি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), সওজ, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। সেতুগুলোর উচ্চতা কম। সেতুগুলোর দৈর্ঘ্য ৫০ থেকে ১০০ ফুটের মধ্যে। অথচ নদের প্রশস্ততা ১৫০ থেকে ২৫০ ফুট। নদের দুই পাড় মাটি দিয়ে ভরাট করে সেতু নির্মাণের কারণে নদের পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মানদণ্ড অনুযায়ী, সেতু পুনর্নির্মাণ করলে নৌপথগুলো সচল হবে। এলাকার নৌচলাচল ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সুগম হবে।

সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব?

ইকবাল কবির জাহিদ: সরকার চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় মাথাভাঙ্গা-ভৈরবের নদী সংযোগ প্রকল্প নিয়েছে। এই নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী পানি ব্যবস্থাপনার এক যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে। ভৈরব, কপোতাক্ষ, হরিহর, শ্রী, চিত্রা, টেকা, বেতনা ও মুক্তেশ্বরী নদী পানিপ্রবাহ ফিরে পাবে। জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, ভূগর্ভস্থ পানি, সাগর থেকে উঠে আসা পলি সমস্যার সমাধান হবে এবং প্রকৃতি-পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য ফিরে পাবে প্রাণের স্পন্দন। মোংলা বন্দরে নাব্যতা বাড়বে। সুন্দরবনে মিঠা পানির জোগান নিশ্চিত হবে। ফলে এসব নদ-নদীর সব সংস্কার কার্যক্রম এর সম্পূরক হতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগকৃত সব অর্থ অপচয় হবে। নতুন সমস্যার জন্ম দেবে।