জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চমক

নুরুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম। তাঁকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ায় দলে নেতা-কর্মীদের অনেকেই অবাক হয়েছেন। বিষয়টি তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনেকে ‘চমক’ হিসেবে দেখছেন।

নুরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৯৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর থেকে নুরুল ইসলামকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে দেখা যায়নি। সবশেষ তিনি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের ধারণা ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম দলীয় মনোনয়ন পাবেন। কারণ, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে যে দুজনের নাম পাঠান, তার মধ্যে রেজাউল করিমের নাম ছিল ১ নম্বরে। এ ছাড়া রেজাউল করিম দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয়।

তবে গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নুরুল ইসলামকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর আগে দলীয় মনোনয়ন পেতে ১২ এপ্রিল ১২ জন নেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন।

আরও পড়ুন

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২ নভেম্বর সবশেষ জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আকমল হোসেন। গত ২৬ ডিসেম্বর আকমল হোসেন মারা গেলে চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়। পরে আওয়ামী লীগের ১২ জন মনোনয়ন চেয়ে ফরম জমা দেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আটজন নেতা জানান, জগন্নাথপুর উপজেলা

আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে দুই ধারায় বিভক্ত। এর মধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের অনুসারীরা একপক্ষে আছেন। অন্যপক্ষে আছেন আজিজুস সামাদের অনুসারীরা। রেজাউল করিম ও নুরুল ইসলাম দুজনই পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুসারী হলেও রেজাউল করিম খুব ঘনিষ্ঠ। এর মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই রেজাউল করিম প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার আমি কৃতজ্ঞ। আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রীর পরামর্শে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয় নিশ্চিত করতে চাই।’

নুরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও দলের কাউকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দেখার সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে। গত দুটি নির্বাচনে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তাদীর আহমেদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। এবার তিনিও বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। মুক্তাদীর বলেন, ‘গত দুটি নির্বাচনে আমার নাম তৃণমূলের সভায় প্রস্তাব হলেও মনোনয়ন বোর্ডে নাম পাঠানো হয়নি, তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। এবার কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার সুযোগ পেয়ে ফরম জমা দেই। মনোনয়ন বোর্ড একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাকে মনোনয়ন দেয়। আমরা যাঁরা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলাম, তাঁদের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় সুযোগ নেই।’

এদিকে রেজাউল করিম নিজেও মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। রেজাউল করিম বলেন, ‘আশা করছিলাম, আমি মনোনয়ন পাব। তবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে কখনো নৌকার বিরুদ্ধে যাইনি। তাই দলের কর্মী হিসেবে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

প্রসঙ্গত, নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। ৩০ এপ্রিল যাচাই-বাছাই, ৮ মে প্রত্যাহার, ৯ মে প্রতীক বরাদ্দ ও ২৫ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।