প্রবেশপত্র আসেনি, বিক্ষোভ করে এইচএসসি পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেলেন ৩৬ শিক্ষার্থী
রাত পোহালেই এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু। কিন্তু প্রবেশপত্র পাননি ৩৬ শিক্ষার্থী। প্রবেশপত্র না পেয়ে তাঁরা কলেজের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ডিগ্রি কলেজে আজ শনিবার বেলা একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে তালা খুলে দেওয়া হয়। বিকেলে স্থানীয় প্রশাসন শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই ৩৬ জনের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ফরম পূরণের ব্যবস্থা করা হয়। এতে অবশেষে তাঁরা আগামীকাল পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন।
রুহিয়া ডিগ্রি কলেজের দপ্তর থেকে জানা যায়, আগামীকাল রোববার এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এবার এইচএসসি পরীক্ষার অনলাইনের ফরম পূরণের কার্যক্রমের শেষ তারিখ ছিল গত ৫ মে পর্যন্ত। আর ‘সোনালী সেবার’ মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা গেছে ৬ মে পর্যন্ত। তবে বিলম্ব ফিসহ ফরম পূরণের সময় ৭ মে শুরু হয়ে চলে ১২ মে পর্যন্ত। বিলম্ব ফিসহ সোনালী সেবার মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা গেছে ১৩ মে পর্যন্ত।
রুহিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য সাধারণ শাখায় ১৬৮ জন ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (বিএম) শাখার প্রথম বর্ষে ১২৮ জন এবং দ্বিতীয় বর্ষে ১২৯ জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেন। ফরম পূরণ শেষে ২৪ জুন বিএম শাখার শিক্ষার্থীদের ও ২৫ জুন সাধারণ শাখার শিক্ষার্থীদের কলেজ থেকে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে বলে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা কলেজ থেকে তাঁদের প্রবেশপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু কলেজের বিএম শাখার ২৫ জন ও সাধারণ শাখার ১১ জন শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে এসে জানতে পারেন, তাঁদের নামে প্রবেশপত্র আসেনি। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করেন। আজ বেলা একটার দিকে শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে কলেজের মূল ফটকে তালা দেন। রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরাও বিক্ষোভে যোগ দেন।
বিক্ষোভকালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিপ্লব চন্দ্র সিংহ বলেন, তিনি ছাড়াও মো. নুরুল্লাহ, রবিউল আলম, আরিফ হোসেন, দুলালী রানী, আফসানা আক্তার, আবু তালেবসহ বিভিন্ন বিভাগের ৩৬ শিক্ষার্থী রুহিয়া ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের নিয়মিত শিক্ষার্থী। কিন্তু তাঁদের প্রবেশপত্র পাওয়া যায়নি। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা বলে, এ ব্যাপারে তাদের কিছুই করার নেই। এমন অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থী কান্নাকাটি করে বাড়ি ফিরে যান। আজ তাঁরা সবাই মিলে বিক্ষোভ করেছেন।
বিষয়টি ঠাকুরগাঁও সদরের ইউএনও বেলায়েত হোসেন ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি পার্থ সারথি সেনের নজরে এলে তাঁরা দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকা কার্যালয়ে সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ৩৬ জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করা হয় এবং প্রবেশপত্র দেওয়া হয়।
সাতজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য কলেজের ল্যাব সহকারী মিজানুর রহমানের কাছে টাকা জমা দিয়েছিলেন। প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে এসে তাঁরা জানতে পারেন, মিজানুর রহমানে তাঁদের ফরম পূরণ করেননি। শিক্ষার্থীদের কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ওই কমিটির মাধ্যমেই তাদের ফরম পূরণ করেছে। যারা ওই কমিটির মাধ্যমে ফরম পূরণ করেছে, তাদের সবারই প্রবেশপত্র এসেছে। তবে শোনা যাচ্ছে, ওই কমিটির বাইরে কেউ কেউ টাকা জমা দিয়েছে। যারা কমিটির বাইরে ফরম পূরণের টাকা দিয়েছে, তাদের দায় আমরা নেব না।’
খবর পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুলফামুল ইসলাম মণ্ডল ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে সমস্যার সমাধানে আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা ফটকের তালা খুলে দেন।
বিষয়টি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি পার্থ সারথি সেনের নজরে এলে তাঁরা দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকা কার্যালয়ে সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মানবিক শাখার ১১ জন ও বিএম শাখার ২৫ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করা হয় এবং প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। আগামীকাল ওই ৩৬ জন পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
এ বিষয়ে ইউএনও বেলায়েত হোসেন বলেন, যেসব শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, তাঁদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা কেন ঘটল, তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।