চকরিয়ায় ৬ ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগপত্র গ্রহণ, পরোয়ানা জারি

দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ছয় ভাই এখন ছবি
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপচাপায় একসঙ্গে ছয় ভাই নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলায় গাড়িচালক, মালিক ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ হোসাইন শুনানি শেষে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মামলার পলাতক আসামি মো. তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

আরও পড়ুন

এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন আরও এক ভাই প্লাবন সুশীল (২৫) ও বোন হীরা সুশীল (২৮)। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তাঁরা সুস্থ হন।

ঘটনার আগে ৩০ জানুয়ারি তাঁদের বাবা সুরেশ সুশীল মারা যান। ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে মালুমঘাটের একটি মন্দিরে বাবার শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে। ছয় ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় প্লাবন সুশীল বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত বছরের ৯ নভেম্বর পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে পিকআপচালক সাহিদুল ইসলাম, গাড়ির মালিক মাহমুদুল করিম ও তাঁর ছেলে মো. তারেককে আসামি করা হয়।

আরও পড়ুন

আদালত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ৯ নভেম্বর পিবিআই কক্সবাজারের পরিদর্শক এনামুল হক চৌধুরী অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছিলেন। আজ শুনানি শেষে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক আসামি মো. তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পিকআপের চাপায় হাসিনাপাড়ার সুরেশ চন্দ্র সুশীলের পাঁচ ছেলে অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীলের (২৯) মৃত্যু হয়। ঘটনার ১৪ দিন পর মারা যান গুরুতর আহত রক্তিম সুশীল (৩২)।

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপচাপায় নিহত ভাইদের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে মা মানু রানী সুশীল ও তাঁদের স্ত্রীরা
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

অভিযোগপত্রে বলা হয়, পিকআপের মালিক মাহামুদুল করিম অনভিজ্ঞ ও লাইসেন্সবিহীন একজন চালকের হাতে গাড়িটি চালানোর জন্য তুলে দেন, যা সড়ক পরিবহন আইনের পরিপন্থী। তা ছাড়া দুর্ঘটনার খবর শুনেও তিনি (মাহামুদুল) আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার উদ্যোগ নেননি। এ জন্য তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার সময় মো. তারেক পিকআপে চালকের পাশে বসা ছিলেন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার না করে উল্টো তিনি চালককে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। চালক সাহিদুল ইচ্ছাকৃতভাবে জেনে-বুঝে গাড়িটি পেছনের দিকে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেন। তাঁর উচিত ছিল প্রথমবার চাপা দেওয়ার পর আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কিংবা পুলিশকে খবর দেওয়া। কিন্তু তা না করে আহত ব্যক্তিদের দ্বিতীয়বার চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তিনি পালান। তাই তাঁর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন আইনের আরও চারটি ধারায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন

চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) শহীদুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মামলার প্রধান আসামি চালক সাহিদুল কারাগারে আছেন। অন্য আসামি গাড়ির মালিক মাহমুদুল করিম জামিনে এবং তাঁর ছেলে মো. তারেক পলাতক ছিলেন। আজ আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।