চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে নির্বাচনে যথেষ্ট কারচুপি হয়েছে, বললেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ‘বড় ধরনের কারচুপির’ অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু হাশেম রেজা। গতকাল সোমবার রাতে দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছিতে রাজনৈতিক কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের পরাজিত ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু হাশেম রেজা ‘বড় ধরনের কারচুপির’ অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি। তবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের পরাজিত ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ফলাফল মেনে নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির সদস্য আবু হাশেম রেজা দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছিতে রাজনৈতিক কার্যালয়ে এবং শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা চুয়াডাঙ্গা শহরে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলেন। নির্বাচন–পরবর্তী অবস্থান তুলে ধরতেই গতকাল সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন নিকটতম দুই পরাজিত প্রার্থী।

নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আলী আজগার ওরফে টগর এবং চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ওরফে ছেলুন নির্বাচিত হয়েছেন।

ফলাফল প্রত্যাখ্যান আবু হাশেমের

রাত ৯টার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আবু হাশেম রেজা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশায় ভোটে দাঁড়াই। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান মেহেরপুরে প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময়কালে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা, পুলিশ সুপারসহ নির্বাচন–সংশ্লিষ্টরা আশ্বস্ত করেন যে এখানে কোনো কারচুপি হবে না, এখানে কোনো জাল ভোট হবে না। অথচ জাল ভোটের ঘটনা ঘটেছে। জাল ভোট দেওয়ার অপরাধে একজনকে তিন বছর এবং আরেকজনকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকজন জাল ভোট দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়লেও তাঁদেরকে কী করা হয়েছে, জানা যায়নি।’

হাশেম রেজা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা আমার আসনে বাস্তবায়ন হয়নি। আমার কাছে প্রতীয়মান হয়নি। যথেষ্ট কারচুপি হয়েছে। কুতুবপুর কেন্দ্রে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জাল ভোট দেওয়া হলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অসহায় মনে হয়েছে। চারুলিয়ায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে একটি প্রতীকে ভোট নিয়েছে। বাস্তপুর গ্রামেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমার পোলিং এজেন্টদেরকে কোথাও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমার এজেন্টরা ঢুকলে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটের দিন অনিয়মের অভিযোগ দিলে তা আমলে নিতে অহেতুক বিলম্ব করা হয়েছে।’

নির্বাচন পরিচালনায় জড়িত কর্মকর্তাসহ প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে হাশেম রেজা বলেন, ‘এই আসনের নির্বাচন বাতিল এবং পুনরায় ভোট দিতে হবে। এ জন্য মাননীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করছি।’

দিলীপ কুমারের সন্তোষ প্রকাশ

ঈগল প্রতীকে ৭২ হাজার ৬৬৮ ভোট পাওয়ায় দিলীপ কুমার আগরওয়ালা নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি স্মার্ট চুয়াডাঙ্গা বিনির্মাণসহ সব ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তাঁর পাশে থেকে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে পরাজিত ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ফলাফল মেনে নিয়েছেন
ছবি: প্রথম আলো

ঈগল প্রতীকসহ এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের যে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৭ ভোটার ভোট দিয়েছেন, তাঁদের শুভেচ্ছা জানান দিলীপ কুমার। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান ও নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দিলীপ বলেন, ‘কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বাদ দিলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে আমি মনে করি। নির্বাচনে যেসব কর্মী-সমর্থক দিনে ও রাতে সঙ্গে থেকে সাহস জুগিয়েছেন, কাজ করেছেন, তাঁদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। ভোটের আগের মতোই ভোটের পরেও তাঁদের সুখ–দুঃখে পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি এবং ভবিষ্যতে তাঁদেরকে আবারও পাশে পাওয়ার আশা করছি।’

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী দিলীপ কুমার তাঁর বুকপকেটে নৌকার প্রতীক নিয়ে উপস্থিত হন। একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো নৌকারই কর্মী। আমার নেত্রী ভোটকে উৎসবমুখর করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বলেছিলেন। তাঁর নির্দেশনা মেনে ভোট করেছি। ভোট শেষ। এখন আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীর সঙ্গে মিলেমিশে চুয়াডাঙ্গার উন্নয়নে কাজ করতে চাই।’

আরও পড়ুন