স্ট্যাম্পে লিখে ঘর ‘হস্তান্তর’

অভিযোগ উঠেছে, ঘর বিক্রির নেপথ্যে রয়েছেন খোকসা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা।

সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পেয়েছিলেন হারুন-অর রশিদ (৭৫)। তবে আইন লঙ্ঘন করে সেই ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে মন্টু ব্যাপারীর কাছে। ওই ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন মন্টু ব্যাপারী। আর হারুন-অর রশিদ থাকেন ওই ঘরের বারান্দায়। এ ঘটনা কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শোমসপুর ইউনিয়নের সাতপাখিয়া পুকুরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের।

অভিযোগ উঠেছে, ঘর বিক্রির নেপথ্যে রয়েছেন খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা। তিনি মন্টু ব্যাপারীর কাছে দেড় লাখ টাকায় ঘরটি বিক্রি করেছেন।

হারুন-অর রশিদের বাড়ি উপজেলার সাতপাকিয়া গ্রামে। মন্টু ব্যাপারীর বাড়িও একই এলাকায়। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে খোকসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন বিশ্বাস বলেন, ‘ডকুমেন্টসহ অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। ইতিমধ্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সাদাতকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। শুক্রবার প্রতিবেদন হাতে পাব। ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সাতপাখিয়া গ্রামে ১৩টি ঘর নির্মাণ করে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে একটি ঘরের বরাদ্দ পেয়েছেন হারুন–অর রশিদ (৭৫)। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে ঘরের চাবি দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি এই ঘর দখল করে নেন স্থানীয় আবুহার ব্যাপারীর ছেলে মন্টু ব্যাপারী (৪০)। এ সম্পর্কে মন্টু ব্যাপারীর স্ত্রী মুসলিমা খাতুন বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজার মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গত ২৪ এপ্রিল ঘরটি কিনেছি। আমার কাছে ৩০০ টাকার লিখিত স্ট্যাম্পনামা রয়েছে। হারুন বৃদ্ধ মানুষ। তাই ঘরের বারান্দায় থাকার জায়গা করে দিছি। তিনি আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন।’

গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের দরজায় ঝুলছে তালা। হারুন-অর রশিদ বারান্দার এক কোনায় কাপড় ও টিন দিয়ে ঘেরা মেঝেতে বসে আছেন। তিনি বলেন, তাঁর কিছু বলার নেই। বললে কি টিকে থাকতে পারবেন? খাচ্ছেন, ঘুরছেন আর বারান্দায় থাকছেন।

হারুন-অর রশিদের মেয়ে খাদিজা খাতুন থাকেন একই গ্রামে। তিনি বলেন, ‘বাবা অসুস্থ। যে যা বলে, তা–ই বোঝেন। মন্টুরা বাবাকে পাগল বানায়া ঘরে থাকেন। আর কনকনে শীতে বাবা থাকেন বারান্দায়। আমরা চাই, বাবা ঘরে থাকুক।’

এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেলিম রেজা বলেন, ‘আমার এক আত্মীয় মারা গেছেন। সেখানে আছি। পরে কথা বলব।’ এরপর উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। ঘর বিক্রির বিষয়ে জানতে গেলে তিনি দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যান।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মাছুম মোর্শেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বিক্রি করা মানে প্রধানমন্ত্রীকে বিক্রি করা। এটা মেনে নেওয়া যাবে না। দলের সভায় বিষয়টি তুলে ধরা হবে। এ ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।