গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই। মোট ৪২ জন চিকিৎসকের বদলে বর্তমানে আছেন ২২ জন। হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত শয্যা। মেঝেতে রোগী রেখে চিকিৎসাসেবা চলছে। ওয়ার্ডগুলো অপরিষ্কার, শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী। নানা সমস্যায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসক–সংকটে রোগীর চাপ সামলানো যাচ্ছে না।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, জেলাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালটি সম্প্রতি ২০০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে ১০০ শয্যার চিকিৎসকই নেই। ১০০ শয্যা হিসেবে মোট ৪২ জন চিকিৎসক দরকার। বর্তমানে আছেন ২২ জন। দীর্ঘদিন ধরে ২০ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য। বিশেষত শিশু, চক্ষু, চর্ম-যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জারি বিভাগে চিকিৎসক নেই।
সূত্রটি জানায়, হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ১ হাজার ২০০ জন রোগীকে সেবা দিতে হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন ২৫০ থেকে ২৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে। চিকিৎসক–সংকটের কারণে তাঁদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুব হোসেন বললেন, এখানে রোগীর চাপ বেশি। কিন্তু চিকিৎসক–সংকটে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। শূন্য পদ পূরণে গত ১৭ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আবেদন দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো সাড়া পাননি।
১৮ ডিসেম্বর সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, িকিট কাউন্টারের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রোগীর স্বজনেরা। চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রোগীরা। নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার বারান্দায় চিকিৎসাধীন রোগীরা শয্যা পেতেছেন। রোগীর সঙ্গে আছে স্বজনেরা। ওয়ার্ডের ভেতরটা অপরিষ্কার।
শিশু ওয়ার্ডের একই অবস্থা অবস্থা। শিশু ওয়ার্ডের বিছানায় মলমূত্র ছড়িয়ে আছে। বিছানার কাপড় অপরিষ্কার। মেঝেতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা। সেখানে বিড়ালও দেখা যায়।
সদর উপজেলার চাপাদহ গ্রামের রমিচা বেগম (৪৫) বললেন, ‘হাসপাতালের ওয়াডোত বেড ফাঁকা নাই। তাই দুই দিন থাকি বারান্দাত আচি। দিনে একব্যার ডাকতার দেকি যায়, আর নাই। বাইর থাকি ওসুদ কেনা নাগে। নার্চরা খালি কোন ওসুদ কখোন খাবেন, তাক দ্যাকে দ্যায়। ভাত খাব্যার বসলে বিড়াল যন্ত্রণা করে।’
নিচতলা ও দুইতলার শৌচাগারগুলো অপরিচ্ছন্ন। সেখানে পানি উপচে মলমূত্র ভেসে বেড়াচ্ছে। সেখানে দুর্গন্ধে টেকা দায়। বোয়ালি গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৫৬) বললেন, তাঁর এক আত্মীয়কে চার দিন হলো এখানে ভর্তি করেছেন। তাঁর জন্য হাসপাতালে রাতে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু শৌচাগার ব্যবহার দূরের কথা, ভেতরে যাওয়াই দুষ্কর। নারী রোগী ও স্বজনদের হয়েছে আরও দুরবস্থা।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেন বলেন, হাসপাতালের সব ওয়ার্ড ও প্রস্রাব-পায়খানার ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। কিন্তু রোগীর লোকজন এগুলোতে ময়লা ফেলে নোংরা করে। রোগীদের ভালো খাবার দেওয়া হচ্ছে কিনা, তাও তদারকি করা হচ্ছে।