বিএনপির নির্দেশনা তৃণমূলে উপেক্ষিত, ভোটে ৬৬ জন

বিএনপি এবার পাঁচ সিটির নির্বাচনেই মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তা অমান্য হচ্ছে তৃণমূলে।

দলের নির্দেশনা এবং দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার ঝুঁকি, সবকিছু উপেক্ষা করে বিএনপির ৩৯ জন নেতা–কর্মী সিলেটে ভোটের মাঠে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৮ জন কাউন্সিলর পদে এবং একজন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ওই ৩৯ জনের ব্যাপারে বিএনপি দু–এক দিনের মধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারে বলে দলটির নেতারা বলছেন।

সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি এবার পাঁচ সিটির নির্বাচনেই মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। দলটি তাদের এ অবস্থানের ব্যাপারে তৃণমূলের নেতাদের দফায় দফায় নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিলেটে ভোটে রয়েছেন ৩৯ জন। অন্যদিকে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বরিশালে ১৯ ও খুলনায় ৮ জন সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি।

যদিও সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অনেক দিন রহস্য রাখার পর শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদেও দলগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার দলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সতর্ক করে বিএনপি সিলেটের ৩২ জন নেতাকে চিঠি দিয়েছিল। দলের এমন অবস্থানের মুখে সেখানে কাউন্সিলর পদে ভোট করতে আগ্রহী বিএনপির ১৪ জন নেতা অবশেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপরও সিলেটে দলটির ৩৯ জন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের এ ধরনের অবস্থান নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিএনপিতে।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে অংশ না নিতে দল থেকে বারবার নেতা–কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি মৌখিকভাবেও জানানো হয়েছে। এরপরও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, দলের কেন্দ্রে তাঁদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ বিএনপির ১৫ জন নেতা–কর্মী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন দলটির আরও ৩৯ নেতা-কর্মী।

■ বরিশালে ১৯ ও খুলনায় ৮ জন সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মী প্রার্থী হওয়ায় তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি।

তফসিল অনুযায়ী, ২১ জুন পঞ্চমবারের মতো সিলেট সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৪২টি ওয়ার্ডের ১৯০টি ভোটকেন্দ্রে মোট ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ এবং নারী ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪২।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা সম্পন্ন হয়েছে। সিলেটে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টির বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন তিনজন। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে ২৭৩ এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সিলেটে বিএনপির নেতা–কর্মী যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৯ জন নেতা-কর্মী সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে একজন, কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩ জন আছেন। মেয়র পদে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হয়েছেন ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. ছালাহ উদ্দিন।

কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপিপন্থী বর্তমান পাঁচজন কাউন্সিলর। তাঁরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ৬ নম্বরে মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী, ১৪ নম্বরে ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম এবং ১৮ নম্বরে ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য এ বি এম জিল্লুর রহমান। এ ছাড়া ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে সিলেট মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রোকসানা বেগম (শাহনাজ) প্রার্থী হয়েছেন। তিনি সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের মধ্যে ৩৯ নম্বরে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন (সুমন), ৩৮ নম্বরে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক উসমান হারুন (পনির), ২৯ নম্বরে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, ৩৩ নম্বরে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মো. গৌছ উদ্দিন ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন, ৪০ নম্বরে মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. আবদুল হাছিব উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া ১, ৩, ৫, ১০, ১১, ১৫, ২৩, ২৪, ২৬, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৭, ৪২, ২৯ ও ৩১—এসব নম্বরের ওয়ার্ডগুলোতে বিএনপির জেলা, মহানগর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা প্রার্থী হয়েছেন।

এই প্রার্থীরা গতকাল শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেছেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করেছে। তবে দলের শৃঙ্খলা না মেনে অনেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

বিএনপি সূত্র জানায়, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নেতাদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকা দ্রুতই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হবে। এরপর নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ বা সরাসরি স্থায়ী বহিষ্কার করা হতে পারে।

বরিশাল ও খুলনায় ২৭ জনকে কারণ দর্শাও নোটিশ

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ১৯ জন বর্তমান ও সাবেক নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। তাঁদের মধ্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসানও আছেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির পাঠানো চিঠি সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে কেন তাঁরা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করছেন, সেটি চিঠি পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।

খুলনা সিটি করপোরেশনে দলের নির্দেশ অমান্য করে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় আটজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম বলেন, ওই আট নেতাকে কারণ দর্শানোর চিঠির একটি অনুলিপি তিনিও পেয়েছেন। যাঁদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে, তাঁদের জবাব পাওয়ার পর দলের কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।  

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল প্রতিনিধি, খুলনা]