দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে মনোহরদীতে চেয়ারম্যান প্রার্থী থেকে গেলেন শিল্পমন্ত্রীর ভাই

নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপনছবি: সংগৃহীত

মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে নরসিংদীর মনোহরদীতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।

নজরুল মজিদ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এখন তিনি পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। শিল্পমন্ত্রীও তাঁর পাশে আছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাঁর নির্বাচনের মাঠে থেকে যাওয়াকে সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত ভোটের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

নজরুল মজিদ ছাড়াও মনোহরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের আরও চারজন প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ কুমার রায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান (রঙ্গু) ও রাজধানীতে আইন পেশায় যুক্ত আওয়ামী লীগের কর্মী মাসুদুর রহমান।

এর আগে মনোহরদীতে টানা পাঁচবারের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন সাইফুল ইসলাম খান। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় তাঁকে বাদ দিয়ে শিল্পমন্ত্রীর ভাই নজরুল মজিদকে একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে নাম পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র থেকে সাইফুল ইসলাম খানকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচন করেন সাইফুল ইসলাম খান। ভোটে হারার পর এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আর প্রার্থী হননি।

চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলছেন, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর দলীয় সিদ্ধান্তের পর তাঁরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু শিল্পমন্ত্রীর ভাই এখনো সরে না দাঁড়ানোয় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। শিল্পমন্ত্রীও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভাইয়ের পক্ষে কাজ করছেন।

চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মন্ত্রীর ভাই যদি উপজেলা নির্বাচন করেন, তাহলে খামোখা আমাদের নির্বাচন করে লাভ কী? তিনি (নজরুল মজিদ) ভোটারদের বলে বেড়াচ্ছেন, “ভোট দিলেও আমি, না দিলেও আমিই উপজেলা চেয়ারম্যান।” মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না, সংসদ নির্বাচনের মতো কোনো সংঘাত হবে কি না, এটাই দুশ্চিন্তার বিষয়। ভোট চাইতে গেলে ভোটাররা বলেন, “কেরে ঘুরেন, কষ্ট করেন। ভোট তো কেটেই নেবে। ভোট দিতে পারব, এমন গ্যারান্টি দিতে পারবেন?”’

আরেক প্রার্থী প্রিয়াশীষ কুমার রায় বলেন, তাঁরা আশা করেছিলেন, তাঁর (নজরুল মজিদ) শুভবুদ্ধির উদয় হবে। কিন্তু তিনি সরে দাঁড়াননি। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে তাঁর সরে দাঁড়ানো উচিত ছিল। এক পরিবারেরই যদি সব ক্ষমতা চলে যায়, তাহলে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারা কী করবেন? ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না, সেই শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছি। কিন্তু মন্ত্রীর ছোট ভাই এখনো ভোটের মাঠে আছেন। তবে জনগণের সমর্থন আমার সঙ্গে আছে। দেখা যাক, কী হয়।’

এ বিষয়ে নজরুল মজিদের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরেও একাধিকবার কল দেওয়া হয়। তাঁরা সাড়া না দেওয়ায় এ ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রী-এমপি হয়েও স্বজনদের ক্ষমতায় বসিয়ে নেতা বানাব আর ত্যাগী নেতারা হাঁ করে তাকিয়ে থাকবেন, এটা হতে পারে না। এভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা উচিত নয়। আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, গতকাল বিকেল চারটা পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন প্রার্থীও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাত ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।