কুমিল্লার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির বাড়তি সতর্কতা
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার গাজীপুর গ্রামটি ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে গোমতী নদী। নদীর অংশ বাংলাদেশে পড়লেও নদীর ওপারেই ভারত সীমান্ত। গোমতী নদীতে এখন কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও কোমরসমান পানি।
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে গাজীপুর এলাকায় যেতেই চোখে পড়ল, নদীপাড়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের বাড়তি সতর্কতা। সেখান থেকে পাশের বিবির বাজারের দিকে আরেকটু যেতেই দেখা গেল, সীমান্ত ঘেঁষে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকার দিকে স্থানীয় কেউ যেতে চাইলেও তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। করা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ।
বিজিবির কুমিল্লা ব্যাটালিয়নের (১০ বিজিবি) বিবির বাজার বিওপির সদস্যদের ভাষ্য, কুমিল্লার সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) যেন কাউকে ঠেলে পাঠাতে না পারে, এ জন্য সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘পুশইন’ ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে নানা ধরনের প্রস্তুতিও।
১০ বিজিবি সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে পুশইনের ঘটনা ঘটলেও কুমিল্লার সীমান্ত এলাকায় এখনো এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এরপরও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শুরু থেকেই সতর্ক রয়েছেন বিজিবির সদস্যরা। এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে পাশের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের নলগড়িয়া ও নোয়াবাদী সীমান্ত দিয়ে বিএসএফের সদস্যরা কিছু মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত বিজিবি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক অবস্থানের কারণে পিছু হটে বিএসএফ। পাশের জেলার এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা আরও বাড়ানো হয়েছে।
কুমিল্লার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ভারত সীমান্ত। আজ সরেজমিনে সীমান্তের বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বিজিবির সদস্যদের তৎপরতা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি। সীমান্ত এলাকাগুলোয় দূর থেকে বিএসএফের টহলও দেখা গেছে।
বিজিবির কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বিবির বাজার বিওপির ইনচার্জ সুবেদার মো. আছিকুর রহমান গাজীপুর এলাকায় গোমতী নদীর পাড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পের এমন একজন সদস্যও নেই, যিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৫ থেকে ১৭ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন না। আমাদের এই বিওপির আওতায় তিনটি বিজিবি পোস্ট রয়েছে। দিনের পাশাপাশি রাতে আমরা বেশি সতর্ক থাকছি।’
আছিকুর রহমান বলেন, ‘গোমতী নদীর ওপারে সীমান্ত এলাকা হওয়ায় আমাদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত পুশইনের কোনো চেষ্টা আমাদের এলাকা দিয়ে করা হয়নি। পুশইনের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদক ও চোরাচালানের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’
বিবির বাজার এলাকার বাসিন্দা মাহাবুব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে বর্তমানে বিজিবির তৎপরতা বেড়েছে। আমরা চাই এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক।’
আজ সরেজমিনে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের শাহাপুর সীমান্ত এলাকায় দেখা গেছে, বিএসএফ যেন কাউকে ঠেলে পাঠাতে না পারে, সে জন্য বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। একই অবস্থা দেখা গেছে, আদর্শ সদর উপজেলার গোলাবাড়িসহ কয়েকটি স্থানেও।
শাহাপুর সীমান্ত এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করার কারণে জানুয়ারির শুরু থেকেই আমাদের এলাকায় সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করেছে। কারণ, কাঁটাতারের বেড়াঘেঁষা পুরো সীমান্ত এলাকাতেই বাংলাদেশের কৃষকদের ফসলি জমি রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। এখন আবারও নতুন করে মানুষের মধ্যে একধরনের উদ্বেগ বিরাজ করছে। যার কারণে সীমান্ত এলাকার মানুষ কিছুটা উদ্বিগ্ন। তবে আমরা আশাবাদী, বিজিবির তৎপরতা এমন অবস্থায় থাকলে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না।’
সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুপুরে ১০ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুমিল্লার সীমান্তের কোথাও এখনো ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ঘটেনি। তবে পুশইন ঠেকাতে সতর্ক অবস্থায় থাকার পাশাপাশি আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। আগের চেয়ে টহল দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিজিবির পাশাপাশি আনসার সদস্যদেরও বিভিন্ন স্থানে কাজে লাগানো হয়েছে। এরই মধ্যে সীমান্তের প্রতিটি এলাকায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে বিজিবির সদস্যরা একাধিকবার করে বৈঠক করেছেন, সীমান্ত এলাকায় বিভিন্নভাবে ক্যাম্পেইন করেছেন। স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় এখন গোয়েন্দা তথ্য নেওয়া হচ্ছে। মসজিদে মসজিদে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুশইন ঠেকাতে আরও বিভিন্ন প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় যেন কোনো প্রকার উত্তেজনা না ছড়ায়, সেদিকেও আমরা খেয়াল রাখছি।’