‘রস দুই টাকা গ্লাস বেচাইছি, এলা ১০ টাকাতেও লাভ থাকোছে না’

জিয়া ইসলামের আখের রস পান করছেন এক যুবক। শুক্রবার দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বামনদীঘি বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

তপ্ত দুপুরে মাথার ওপর কাঠফাটা রোদ। একটু স্বস্তি পেতে লোকজন ঠাঁই নেন বাজারের বিভিন্ন দোকানের বারান্দা ও গাছতলায়। এমন সময় ঘণ্টা বাজিয়ে ভ্যানে করে আখ নিয়ে আসেন মধ্যবয়সী জিয়া ইসলাম। মেশিন ঘুরিয়ে আখ থেঁতলে রস গ্লাসে ভরতে থাকেন। সেই রস পান করে দাবদাহে পোড়া ক্লান্ত মানুষ তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। এমন চিত্র দেখ গেল গত শুক্রবার রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বামনদীঘি বাজারে।

বাজারে কথা হয় জিয়া ইসলামের সঙ্গে। আখের রস বিক্রি করেই চলে তাঁর সংসার। আখের রসই তাঁর জীবন–জীবিকার রসদ জোগাচ্ছে বলে জানান তিনি।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের নেকিরহাট গ্রামে জিয়া ইসলামের বাড়ি। প্রায় এক যুগ ধরে তিনি ভ্যানে করে রংপুর সদর ও তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রামগঞ্জে ঘুরে আখের রস বিক্রি করেন। আগে পাঁচ টাকা গ্লাস রস বিক্রি করলেও এখন ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার রস বিক্রি করেন। খরচ বাদে আয় হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। এ আয়ের টাকায় এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার চলছে তাঁর।

দুর্ঘটনার পর ভারী কাজ করির পাই না। পেশা হিসেবে ভ্যানোত করি রস বেচা বাছি নিছু। এলা এটাই মোর জীবন–জীবিকা।
জিয়া ইসলাম, আখের রস বিক্রেতা

প্রায় এক যুগ আগে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন জিয়া ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর ভারী কাজ করির পাই না। পেশা হিসেবে ভ্যানোত করি রস বেচা বাছি নিছু। এলা এটাই মোর জীবন–জীবিকা।’

আখের রস পান করার সময় কথা হয় মেনানগর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পরিতোষ রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, আখের রসে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি আছে। যাঁরা দুর্বল কিংবা ক্লান্ত থাকেন তাঁরা, এ রস খেলে বেশি উপকার পাবেন। আখের রস শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। জন্ডিস নিরাময়ে ভালো কাজ করে। তিনি আরও বলেন, ‘উন্মুক্ত স্থানের মেশিনে ভাঙানো আখের রস যদিও খাওয়া উচিত নয়। তবে জিয়া ভাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে আখ থেকে রস মাড়াই করেন। সবকিছু ঢেকে রাখেন। তাই যখন তাঁর দেখে পাই, এক গ্লাস রস খাই।’

আখ থেকে রস তৈরিতে ব্যস্ত জিয়া ইসলাম। শুক্রবার দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বামনদীঘি বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

জিয়া ইসলামের আখের রসের নিয়মিত ক্রেতা বামনদীঘি বাজারের সোনা মিয়া। তিনি বলেন, ‘রস জিয়া’ বললে এলাকায় যে কেউই তাঁকে চেনেন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর আখের রস পান করছেন। জিয়া চোখের সামনেই মেশিন ঘুরিয়ে আখের রস তৈরি করে দেন। এলাকায় তাঁর রসের চাহিদা বেশ ভালো।

আয়-ব্যয় ও বর্তমান জীবনযাপন বিষয়ে জিয়া ইসলাম বলেন, ‘এক যুগ ধরি এই ব্যবসা করোছি। রস দুই টাকা গ্লাস বেচাইছি, এলা ১০ টাকা বেচাইও লাভ থাকোছে না। কুশারের (আখের) দাম বাড়তি। আগোত তিন শ টাকা কামাই করলেও সংসার ভালোই চলত। এলা সাত-আট শ টাকা কামইলেও মাসে দুই দিন গোশত খাবার পাই না।’

জিয়া খুব পরিশ্রমী মানুষ বলে জানালেন বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী উকিল রায়। তিনি বলেন, ‘আমার পাশের গ্রামে তাঁর বাড়ি। জমাজমি নেই। জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আখের রস ফেরি করে বিক্রি করছেন। অফ সিজনে কৃষিকাজ করেন। তাঁর রস মানুষ খুব পছন্দ করে।’