চাকসুর ছা্ত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থীর সাক্ষাৎকার

ভয়ের রাজনীতি আর নয়

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ভালো ফল করতে পারেনি। এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন যেন তাদের কাছে এক ‘কঠিন পরীক্ষা’। ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজয় চৌধুরী

প্রথম আলো:

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছেন কেমন?

সাজ্জাদ হোসেন: আমরা প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি, তাঁদের ভাবনা আর চাওয়া-পাওয়া শুনছি। হল, কটেজ, ঝুপড়ি, স্টেশন—বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রান্তে ঘুরছি। শিক্ষার্থীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা, সমস্যার কথা বলছেন, আমরা তা মনোযোগ দিয়ে নোট করছি। উদ্দেশ্য একটাই—সম্পর্ক তৈরি করা। সত্যি বলতে, শিক্ষার্থীদের সাড়া দারুণ পাচ্ছি।

প্রথম আলো:

ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নিয়মিত প্রচারের বাইরে কোনো বিশেষ কৌশল আছে?

সাজ্জাদ হোসেন: আমাদের মূল কৌশলই হলো স্বচ্ছতা। ছাত্রদল সব সময় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক রাজনীতি করেছে। চাঁদাবাজি, দখল, মারধর বা শাটল ট্রেন বন্ধ—এসব আমাদের ইতিহাসে নেই। আমরা সেই বিষয়টাই তুলে ধরছি। অনলাইন প্রচারের পাশাপাশি সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীদের চোখে চোখ রেখে কথা বললেই আস্থা তৈরি হয়—ব্যানার নয়।

প্রথম আলো:

মনে করা হচ্ছে, ছাত্রী ও হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের ভোট নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে। এই ভোটব্যাংক নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

সাজ্জাদ হোসেন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী হলের বাইরে থাকেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছি। নির্বাচিত হলে নতুন আবাসিক হল নির্মাণে প্রশাসনকে বাধ্য করব। আর নারী শিক্ষার্থীদের কথা বললে, তাঁদের জন্য আমরা একেবারে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছি। ইশতেহারে যেসব দফা যুক্ত করেছি, সেগুলোর পেছনে আছে তাঁদের মতামত। নারীদের পোশাকের স্বাধীনতা, নিরাপদ চলাচল, যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ—এসব নিয়ে আমরা আপসহীন। ক্যাম্পাসে কোনো নারীবিদ্বেষী রাজনীতি চলবে না, এটা আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই।

প্রথম আলো:

প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন আপনারা। এর কারণ কী?

সাজ্জাদ হোসেন: গণ-অভ্যুত্থানের পর সবাই চেয়েছিল নিরপেক্ষ প্রশাসন, কিন্তু আমরা হতাশ হয়েছি। একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী এখনো প্রশাসনের ছায়ায় আধিপত্য বজায় রেখেছে। তাদের মাধ্যমে চলছে মোরাল পুলিশিং, ভয় দেখানোর সংস্কৃতি। আমরা এই অবস্থা পরিবর্তন করতে চাই।

সহজ করে বললে, প্রশাসন এখনো একটি নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনের স্বার্থে কাজ করছে, ফলে তারা নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। আমাদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানানো।

প্রথম আলো:

ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল ভালো ফল করতে পারেনি। তার প্রভাব কি চাকসুতেও পড়বে?

সাজ্জাদ হোসেন: না, আমি তা মনে করি না। ডাকসু ও জাকসুর নির্বাচন ছিল বিতর্কিত, সেখানে প্রকৃত ভোট হয়নি। কিন্তু চাকসু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন অনেক সচেতন। তাঁরা জানেন কে তাঁদের পক্ষে ছিল, কে নয়। ছাত্রদল সব সময় শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে রাজনীতি করেছে। দখল নয়। আমি বিশ্বাস করি, এখানে অতীতের (দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল) পুনরাবৃত্তি হবে না।

প্রথম আলো:

নিজের এবং আপনার প্যানেলের জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?

সাজ্জাদ হোসেন: আমরা মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের নিয়ে প্যানেল সাজিয়েছি। যাঁরা জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, মাঠে ছিলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন, তাঁরাই জায়গা পেয়েছেন। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে হয়, তাহলে আমিসহ প্যানেলের বেশির ভাগ প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হব।