জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষের অব্যাহতিসহ ৫ দাবিতে মানববন্ধন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে আজ রোববার দুপুরে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ–কাণ্ডে জড়িতদের সহায়তার অভিযোগে প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষকে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়াসহ পাঁচ দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে।

আজ রোববার বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’ ব্যানারে এই মানববন্ধন করেন কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে তাঁরা উপাচার্য মো. নূরুল আলমের সঙ্গে দেখা করতে যান।

মানববন্ধনকারীদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত করা, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা এবং র‍্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা। ইতিমধ্যে যৌন নিপীড়ন সেলে উত্থাপিত সব অমীমাংসিত অভিযোগসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানা অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা। মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।

মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের একাংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসিব জামান। এতে বক্তব্য দেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘মাদকের কারণেই জনিদের (বরখাস্ত শিক্ষক) জন্ম হয়। মাদকের কারণেই মোস্তাফিজদের (ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত) জন্ম হয়েছে। এ জন্য ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত করতে হবে। আমরা যদি মাদক ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করতে না পারি, তাহলে একের পর এক মেধাবী শিক্ষক বা শিক্ষার্থী ধর্ষক বা নিপীড়ক হয়ে ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নেবে। আর এসব দায় প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।’

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, ‘আমরা একটি নৈতিক অবস্থান থেকে আন্দোলন করছি। বিশ্ববিদ্যালয় যেন মনে না করে আমরা গুটিকয় মানুষ আন্দোলন করছি। আমরা এখানে গুটিকয় মানুষ থাকলেও ক্যাম্পাসের সর্বস্তরের মানুষের নৈতিক সমর্থন আমাদের সঙ্গে রয়েছে।’

শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি ও প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ অভিযোগ করেন, শিক্ষক মাহমুদুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করার আগে তদন্তের সময় অভিযোগকারী প্রাক্তন ছাত্রীকে দায়মুক্তি আদায়ে বাধ্য করা, চাপ প্রয়োগ ও প্রলোভন দেখিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হক। তিনি বলেন, ‘প্রক্টর কোনোভাবেই এই অপরাধের দায় এড়াতে পারেন না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বা সিন্ডিকেট তাঁর এই অপরাধের শাস্তি দেয়নি। এই প্রক্টরকে শুধু অপসারণ করলে হবে না, তাঁর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রববানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।

দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি ছাত্র ইউনিয়নের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ এবং থানায় দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহার করাসহ পাঁচ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। আজ দুপুরে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের নতুন কলাভবন এলাকা থেকে শুরু হয়ে কয়েকটি সড়ক ঘুরে বটতলায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়।

ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করাসহ পাঁচ দাবিতে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী
ছবি: প্রথম আলো

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সহসভাপতি আশফার নবীন বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে তাঁদের কোনো ধরনের শোকজপত্র না দিয়েই বহিষ্কার করা হয়েছে। অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী দীর্ঘদিন ধরে গণরুম, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন। ধর্ষণের ঘটনার পর তাঁরা ধর্ষকের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এতে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেই ক্ষোভ থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।