চার প্রার্থী ভোটে ‘অনিয়ম’ দেখেছেন, ‘সমস্যা’ দেখেননি ডিসি-এসপি

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির সঙ্গে কথা বলার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান। পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামও কথা বলেছেন
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পেয়েছে তদন্ত কমিটি। নির্বাচনে অংশ নেওয়া পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চার প্রার্থী দাবি করেছেন, নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে। এ কারণে তাঁরা নির্বাচন বর্জন করেছেন। তবে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, তাঁরা কোনো অনিয়ম দেখেননি। তাঁদের কাছে কেউ অভিযোগও করেননি।  

আজ বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির কাছে চার প্রার্থী ও ডিসি-এসপি এমন বক্তব্য দেন। আজ তৃতীয় দিনের তদন্তকাজ সম্পন্ন হয়। সকাল নয়টায় গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে তদন্তকাজ শুরু হয়। তিন দিনব্যাপী এই তদন্তকাজ শেষ হয় বেলা আড়াইটার দিকে। তিন দিনে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ৬২২ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়। মোট ৬৮৫ জনের বক্তব্য নেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে প্রথম দিনে ১৪৬ জন, দ্বিতীয় দিনে ৪৩০ জন এবং শেষ দিনে ৪৬ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়।

আজ গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে ৫ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, ১৭ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র‍্যাবের কমান্ডিং কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করা পুলিশ কর্মকর্তাসহ বক্তব্য নেওয়া হয় ৪৬ জনের।

তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ প্রার্থীদের অনুকূলে ছিল না। এ কারণে আমরা চারজন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছি। আমরা এসব কথাই তদন্ত কমিটিকে বলেছি।’

আরও পড়ুন

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী গোলাম শহীদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন অনিয়ম পাওয়ার পরই নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। এই উপনির্বাচনের মধ্য দিয়ে কমিশন যদি আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে, তাহলে হয়তো সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দেবে। আমরা এসব কথাই তদন্ত কমিটিকে বলেছি।’

তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান বলেন, এ আসনে মোট ১৪৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫১টির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি যে কেন্দ্রগুলো রয়েছে, সেগুলোর ফলাফল ঘোষণার জন্য তিনি তদন্ত কমিটিকে বলেছেন।

গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটের দিনের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চেয়েছিল তদন্ত কমিটি। আমরা আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছি।’ ভোট গ্রহণ কেমন দেখেছেন—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক কেন্দ্র পরিদর্শন করি। অনেকের সঙ্গে কথা বলি। কেউ কোনো অভিযোগ আমাদের দেয়নি। আমরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ দেখেছি।’

জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, ‘আমরা যে জায়গাগুলো দেখেছি, সেগুলোতে শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চলছিল। কমিশন আমাদের অবহিত করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। নির্বাচনে আমাদের দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক আছে কিনা। কেউ যদি অভিযোগ দেন, সেই ব্যাপারে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু আমাদের কাছে এ–সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। যতগুলো কেন্দ্র আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি, আমরা কোনো সমস্যা দেখিনি। সেই বিষয়গুলো আমরা তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছি।’

তদন্তকাজ শেষে বেলা আড়াইটার দিকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অশোক কুমার দেবনাথ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত কার্যক্রমে ৬৮৫ জনের বক্তব্য নেওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে পোলিং এজেন্টরা না আসায় ৬২২ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়। এই তিন দিনের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন আমরা নির্বাচন কমিশনে জমা দেব। কমিশন সেটা প্রকাশ করবে, নাকি করবে না, সেটা কমিশনের ব্যাপার। তবে তদন্ত–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমরা কিছু বলব না।’

উপনির্বাচনে অনিয়ম তদন্তে ১৩ অক্টোবর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন। কমিটির কর্মকর্তারা হচ্ছেন আহ্বায়ক বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, সদস্যসচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী ও সদস্য যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ কমিটি গঠন করেন।

আরও পড়ুন

১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। দুপুরে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চারজন ভোট বর্জন করেন। এরপর ঢাকা থেকে সিসিটিভি ক্যামেরায় কেন্দ্রে নানা অনিয়ম দেখে নির্বাচন কমিশন প্রথমে ৪৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। পরে বেলা দুইটার দিকে উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্টির (জাপা) এ এইচ এম গোলাম শহীদ, বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।


এই আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।