নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন হয়নি

নৌ ফায়ার স্টেশন না থাকায় সেদিনের লঞ্চের আগুন নেভাতে ও উদ্ধারকাজে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

মাঝনদীতে আগুনে পুড়ছে অভিযান–১০ লঞ্চফাইল ছবি

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। জেলায় নৌপথের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নৌ ফায়ার স্টেশন না থাকায় সেদিন লঞ্চের আগুন নেভাতে ও উদ্ধারকাজে বরিশাল থেকে যোগ দিয়েছিল নৌ ফায়ার স্টেশন ইউনিট ও ডুবুরি দল। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ট্রলারযোগে। এতে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। চার নদীর মোহনাবেষ্টিত গুরুত্বপূর্ণ এ জেলায় নৌপথের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নৌ ফায়ার স্টেশন না থাকায় সেদিনের লঞ্চের আগুন নেভাতে ও উদ্ধারকাজে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নৌ ফায়ার স্টেশনের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এক বছর পার হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
শফিকুল ইসলাম, ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার

নৌ ফায়ার স্টেশন থাকলে সেদিন ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি আরও কম হতো বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। এত বিপুলসংখ্যক প্রাণহানির পরও এক বছরেও জেলায় নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন হয়নি। এ ছাড়া ১৯৬৩ সালে ঝালকাঠিতে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশনটিকে ছয় বছর আগে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রস্তাব পাঠানো হলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সেদিনের দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন।

* লঞ্চটিতে অগ্নি প্রতিরোধের ব্যবস্থা ছিল না, নির্বাপণেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। * নৌ ফায়ার স্টেশন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সেদিনের দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা।

অভিযান-১০ লঞ্চে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযানের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, এত বড় একটি নৌ দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযানের প্রথম দিকে কর্তৃপক্ষের আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। পরে তাঁদের সেই আগ্রহে ভাটা পড়ে। কারণ, ভেসে ওঠা লাশ এলাকাবাসী উদ্ধার করে তাঁদের খবর দিয়েছিলেন।

ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্যমতে, অভিযান-১০ লঞ্চটিতে অগ্নি প্রতিরোধের ব্যবস্থা তো ছিলই না, নির্বাপণেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। ঝালকাঠি ফায়ার স্টেশনের সাব অফিসার সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনার বিষয়টি বিবেচনা করে ভবিষ্যতে প্রতিটি নৌযানে দুজন করে ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের সময় লঞ্চের কর্মী ও যাত্রীরা ভড়কে যান। তাই ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা থাকলে তাঁদের প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

সুগন্ধা, বিষখালী, বাসন্ডা ও গাবখান—এই চার নদীর মোহনায় উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি অবস্থিত হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এ নৌপথে বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী অসংখ্য জাহাজ চলাচল করে। এখানে গাবখান চ্যানেল রয়েছে। এই চ্যানেল দিয়ে খুলনা, মোংলা, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কলকাতায় চলাচল করে অনেক নৌযান। এ ছাড়া বরগুনা, পাথরঘাটা, বরিশাল ও ঢাকার নৌযান চলাচল করে।

ঝালকাঠি-ঢাকা রুটে চলাচল করা ফারহান-৭ লঞ্চের মাস্টার (চালক) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা জরুরি।

সুগন্ধা নদীর তীরবর্তী দিয়াকুল গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘সেদিন লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের পরে আমি শিশু-বয়স্ক ব্যক্তিসহ কয়েকজনকে নদী থেকে উদ্ধার করি। এখানে যদি নৌ ফায়ার স্টেশন থাকত, তাহলে এই পরিমাণ ক্ষতি হতো না। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা না হয়, তাহলে পরবর্তী সময়েও এ রকম বিপদ হতে পারে।’

ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুগন্ধা নদীতীরের বাসিন্দা ঝালকাঠি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ূন কবির বলেন, ‘আগুন দেখেই দ্রুততম সময়ে উদ্ধারকাজে যোগ দিই সেদিন। অগ্নিদগ্ধ মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। সে রকম কোনো পরিস্থিতি যেন আর তৈরি না হয়, সে কারণে জরুরি ভিত্তিতে নৌ ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা দরকার।’

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নৌ ফায়ার স্টেশনের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এক বছর পার হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। নৌ ফায়ার স্টেশন হলে এতে ডুবুরি দলও থাকবে, অগ্নিকাণ্ড হলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো যাবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঝালকাঠিতে নৌ ফায়ার স্টেশনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অনুমোদন হলে নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে।