যৌতুকের টাকা না পেয়ে গরম পানি দিয়ে স্ত্রীকে ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ

জয়পুরহাট জেলার মানচিত্র

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের টাকা না পেয়ে গরম পানি দিয়ে গৃহবধূর শরীর ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার তালোড়া বাইগুনি গ্রামে গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী গৃহবধূর নাম সুরাইয়া আক্তার (২২)। তিনি তালোড়া বাইগুনি গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী। গৃহবধূর স্বজনেরা রাতেই তাঁকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নাহিদা আক্তার বলেন, গতকাল রাতে সুরাইয়া আক্তারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর শরীরের বেশ কিছু অংশ ঝলসে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গ্রামবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর সুরাইয়ার সঙ্গে সুমন মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে সুমনকে এক লাখ টাকা, এক ভরি স্বর্ণ ও বেশ কিছু আসবাব দেওয়া হয়। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি থেকে আরও যৌতুক আনতে স্ত্রীকে চাপ দেন সুমন। এ সময় সুরাইয়া তাঁর বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা এনে দেন তাঁর স্বামীকে। সুমন কোনো আয়রোজগার করতেন না। দুই মাস আগে তিনি আবার শ্বশুরবাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক আনতে স্ত্রী সুরাইয়াকে চাপ দেন। কিন্তু সুরাইয়া সেই টাকা আনতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় সুমন ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে মারধর করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

এলাকাবাসী জানান, ওই ঘটনায় তখন থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর সালিসের মাধ্যমে সুরাইয়া আবার স্বামীর বাড়িতে ফিরে যান। কয়েক দিন ধরে সুমন আবার শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে চাপ দিচ্ছিলেন স্ত্রীকে। গতকাল রাতে সুরাইয়া ভাত রান্না করছিলেন। এ সময় সুমন রান্নাঘরে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর কাছে যৌতুকের টাকা কবে আনতে পারবেন, জানতে চান। কিন্তু সুরাইয়া যৌতুকের টাকা আনতে অস্বীকার করলে সুমন মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে চুলায় থাকা গরম পানি তাঁর স্ত্রীর গায়ে ঢেলে দেন। এতে তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। ওই গৃহবধূর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে সুরাইয়ার বাবা-মা রাতেই সুমনের বাড়িতে গিয়ে সুরাইয়াকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

সুরাইয়ার বাবা আসমান ফকির প্রথম আলোকে বলেন, জামাতা সুমন যৌতুকের টাকার জন্য তাঁর মেয়েকে চাপ দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে প্রায় স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করতেন। তাঁর মেয়ে যৌতুকের টাকা এনে দিতে রাজি না হওয়ায় সুমন মেয়ের শরীরে গরম পানি ঢেলে দিয়েছেন। এতে তাঁর মেয়ের শরীর ঝলসে গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে সুমন মিয়া বলেন, ‘যৌতুকের জন্য নয়, রাগের মাথায় স্ত্রীর গায়ে একটু গরম পানি ছুড়েছি। এভাবে ঝলসে যাবে, কখনো ভাবিনি।’

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারি বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। ওই গৃহবধূ এখন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।