খানসামায় মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করলেন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। মঙ্গলবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচিতে উপকারভোগীর তালিকা তৈরিতে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নিরঞ্জন কুমারকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্যসহ ৭৮ জন জনপ্রতিনিধি ওই কর্মকর্তাকে নিজ অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিলেন ওই কর্মকর্তা। পরে খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চিত্তরঞ্জন রায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন।

উপজেলার ভাবকী ইউপির চেয়ারম্যান রবিউল আলম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ভিডব্লিউবি কমিটি উপকারভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে উপজেলা কমিটিতে পাঠাবে। পরে উপজেলা কমিটি তা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেবে। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা কমিটি নিজেরাই উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুত করেছে। এখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মূল্যায়ন করা হয়নি। নিয়ম মেনে নতুন তালিকা প্রস্তুত করার দাবি জানান তিনি।

উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশিদা আক্তার বলেন, চেয়ারম্যানরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইনে উপকারভোগীদের তথ্য হালনাগাদ করেননি। ফলে পরবর্তী সময়ে উপজেলা প্রশাসন নামের তালিকা আংশিক হালনাগাদ করে অধিদপ্তরে পাঠিয়েছে। বিষয়টি চেয়ারম্যানরা মানতে চান না​। ১৪ জানুয়ারি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

খানসামা উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরাম কমিটির সভাপতি ও আংগারপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান মোস্তফা শাহ বলেন, ‘যাচাই-বাছাই করে সঠিক দুস্থ নারীদের তালিকা তৈরি করার জন্য উপজেলা থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা না করে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা তাঁর পছন্দমতো ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা প্রস্তুত করেছেন। তাতে ইউএনওর অনুমোদনও নিয়েছেন। এটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়মবহির্ভূত। এই তালিকা আমরা মানি না। অবিলম্বে এই তালিকা পরিবর্তন করে চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকৃত উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুত করে অধিদপ্তরে পাঠাতে হবে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে যদি সেটি করা না হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, একই সঙ্গে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন চেয়ারম্যানরা।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডব্লিউবি কর্মসূচির উপকারভোগীর নির্বাচনে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। যার সভাপতি পদাধিকার বলে ইউএনও। ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২৭ অক্টোবর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর উপজেলায় ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের কাছে অনলাইনে তালিকা আহ্বান করে। ২৪ মাস কর্মসূচির আওতায় একজন উপকারভোগী প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন। মোট ১৯ হাজার নারী উপকারভোগী হতে অনলাইনে আবেদন করেন। ঢাকায় মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ওই আবেদনের ভিত্তিতে প্রতিটি ইউনিয়নে জনসংখ্যার অনুপাতে মোট ২ হাজার ৬৫৯ জনের তালিকা করে এবং ১০ শতাংশ নারীকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখে। এই দুই তালিকার হার্ড কপি উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। এই তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গত বছর ১১ ডিসেম্বর ৬টি ইউপির চেয়ারম্যানদের পাসওয়ার্ড সরবরাহ করা হয়। ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে অনলাইনে তা যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নিরঞ্জন কুমার বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তালিকা যাচাই-বাছাই করেননি ইউপি চেয়ারম্যানরা। ফলে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে যে তালিকা প্রথমে আমাদের পাঠানো হয়েছিল, সেটিই পাঠানো হয়েছে। আমি ইউএনওর আদেশ অনুসরণ করেছি। অথচ ইউপি চেয়ারম্যানরা আমাকে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।’