ঈদের ছুটিতে সাফারি পার্কে ছুটছেন দর্শনার্থীরা, প্রচণ্ড গরমে ভিড় কিছুটা কম
ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে গাজীপুরের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় বেড়েছে। আজ রোববার ঈদের দ্বিতীয় দিনে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত গাজীপুর সাফারি পার্কে এসেছেন দর্শনার্থীরা। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভিড় তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আজ বিকেলে সাফারি পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, মূল ফটকের বাইরে পার্কিংয়ে দর্শনার্থীদের প্রচুর গাড়ি। ফটক দিয়ে প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা। কেউ পার্কের ভেতরে প্রবেশের আগেই বাইরে ছোট ছোট দোকান থেকে কেনাকাটা করছেন। অনেকেই আবার ঘোড়ায় চড়ছেন।
ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, পার্কের কোর সাফারি অংশে প্রবেশের ফটকের সামনে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি। তাঁরা টিকিট কেটে কোর সাফারিতে প্রবেশের অপেক্ষা করছেন। কোর সাফারির ফটকের ভেতরে ছাউনির নিচে তিনটি সারিতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন আরও কিছু দর্শনার্থী। কিছুক্ষণ পরপর সেখান থেকে মিনিবাসে করে তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কোর সাফারির ভেতরে। এসব মিনিবাসে চড়ে দর্শনার্থীরা দেখছেন বাঘ, ভালুক, জিরাফ, জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট, নীল গাই, হরিণ, সিংহসহ নানা প্রাণী।
একটি মিনিবাসে প্রায় ২৫ জন দর্শনার্থী কোর সাফারি পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান। মিনিবাসে চড়ে দেখা যায়, প্রতিটি প্রাণীর অ্যাভিয়্যারিতে প্রবেশ করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটির ফটক খুলে যায়। বাঘেদের থাকার নির্দিষ্ট এরিয়ায় প্রবেশের পর দর্শনার্থীদের মধ্যে রাজ্যের কৌতূহল। তাঁদের সঙ্গে থাকা শিশুরা হঠাৎ একটি বাঘকে বিশ্রামরত অবস্থায় দেখতে পেয়ে খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠল। বড়রা স্মার্টফোন দিয়ে ছবি তুলতে লাগলেন। এভাবেই মিনিবাসটি একটি প্রাণীর এরিয়া থেকে অন্য প্রাণীর এরিয়ায় প্রবেশ করছিল। যেতে যেতে দেখা গেল একদল সিংহ গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। অপর একটি এলাকায় দেখা পাওয়া গেল কালো ভালুকের। এ ছাড়া যেতে যেতে দেখা হলো জিরাফ, জেব্রা হরিণসহ অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে।
পার্কের পাখিশালা সাফারি কিংডমের ভেতর অবস্থিত। সেখানে দর্শনার্থীরা দেখছেন ম্যাকাওসহ বিদেশি বিভিন্ন ধরনের পাখি। কেউ কেউ পাখির সঙ্গে সেলফি তুলছেন। অনেকেই আবার সেখানে থাকা বিদেশি টিয়া পাখির সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করছেন। দর্শনার্থীদের সমাগম দেখা গেছে কুমির, জলহস্তী, মদনটাক, উটপাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর বেষ্টনীর সামনে।
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কষ্ট হলেও নিজের সন্তানকে সরাসরি বাঘ দেখাতে পেরে খুশি মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটি পেয়েছি। গরমের মধ্যেই ছুটি কাটাতে প্রাণী দেখতে এসেছি। গরমে কষ্ট হইলেও বাচ্চাটা বাঘ দেইখা আনন্দ পাইছে।’ ইসরাত জাহান নামের এক স্কুলশিক্ষার্থী বলে, ‘চোখের সামনে বাঘ-সিংহ দেখলাম, ছবিও তুলেছি।’
তবে ঘুরতে এসে ভোগান্তির কথাও জানালেন কোনো কোনো দর্শনার্থী। মো. আকবর হোসেন নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘বাসের মধ্যে এসি নাই। গরমে অনেক কষ্ট হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য আরও সুবিধা রাখা উচিত ছিল।’ একই ধরনের অভিযোগ করেছেন অপর দর্শনার্থী মো. উজ্জ্বল। তিনি বলেন, টাকা দিয়ে প্রবেশ করেছি, সেই তুলনায় গরমের কারণে আনন্দের চেয়ে কষ্ট পেয়েছি বেশি। অল্পসংখ্যক বাস দিয়ে দর্শনার্থীদের সেবা দিচ্ছেন তাঁরা। তা–ও আবার এগুলোর এয়ারকন্ডিশন সিস্টেম নষ্ট।’
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে শুরুর দিকে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। বৈরী আবহাওয়ার জন্য দর্শনার্থীর সংখ্যা কম। পাঁচটি বাস চলছে। এগুলোতে কিছু সমস্যা আছে। দর্শনার্থীদের তুলনায় বাসের সংখ্যা কম। আরও বাড়ানো উচিত। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।