নাহিদ, শমসের ও সরওয়ারের ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। বড় একটা অংশ সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরওয়ার হোসেন (ঈগল) এবং তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরীর (সোনালী আঁশ) পক্ষে কিছু নেতা কাজ করছেন। ফলে এ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটারেরা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, টানা তিন দফা সংসদ সদস্য থাকাকালে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামের সঙ্গে দলের অনেক কর্মী-সমর্থকের দূরত্ব তৈরি হয়। কিছু নেতা-কর্মী তাঁর বিরুদ্ধে এককাট্টা রয়েছেন। এ কারণেই এবার তাঁর আসনে ১১ নেতা দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নুরুল ইসলাম মনোনয়ন পেলেও দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ঘোচেনি। ফলে নির্বাচনে তাঁর বিরোধীরা অনেকটা প্রকাশ্যে অন্য দুজন প্রভাবশালী নেতার পক্ষে সরব হন।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনী এলাকা ঘুরে অন্তত ২০ জন ভোটারের সঙ্গে প্রথম আলোর প্রতিবেদকের কথা হয়। ভোটারেরা এ সময় জানান, আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় অনেক ভোটার নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকে কেন্দ্রেও যাবেন না। তবে ভোটার কেন্দ্রে টানতে তিন প্রার্থীর পক্ষের কর্মীরা মাঠে সরব।

নেতা-কর্মীরা বলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম সরাসরি নুরুল ইসলামের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেনের সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্যদিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর শাফি চৌধুরী ভেতরে-ভেতরে শমসের মুবিনকে সমর্থন দিচ্ছেন। তাঁদের বাইরে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী এ দুজনের পক্ষে সরব রয়েছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে।

যোগাযোগ করলে মঞ্জুর শাফি চৌধুরী বলেন, তিনি তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে কোনো সমর্থন দেননি। তবে গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন এবং গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আসাই জানান, দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নানা কারণে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া নিজেদের উপজেলায় একজন ভালো প্রার্থী থাকায় তাঁরা শমসের মুবিনের পক্ষ নিয়েছেন।

বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, ‘উপজেলা কিংবা পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমাকে রাখেননি। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেননি। আর নেত্রী (শেখ হাসিনা) যেহেতু নির্বাচন দলের সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাই আমিও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।’

তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। দু-চারজন হয়তো অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে আছেন। তবে দলে কোনো বিভক্তি নেই। ভোটারেরা তাঁকে পুনরায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

চারদিক প্রচারণায় মুখর

প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে সিলেট-৬ আসন। প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে আছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। পাড়া-মহল্লায় চলছে মাইকিং। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রচারপত্র বিলি করে ভোট চাইছেন।

গতকাল বেলা সোয়া চারটার দিকে গোলাপগঞ্জের আমনিয়া বাজারে পথসভার পাশাপাশি গণসংযোগ করেন শমসের মুবিন চৌধুরী। পথসভায় তিনি বলেন, ‘আমি আকাশচুম্বী কোনো প্রতিশ্রুতি দেব না, যা করতে পারব, তাই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’

গণসংযোগকালে সরওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেখানেই যাচ্ছি, ভোটারদের সাড়া পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। তবে কিছু স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা আমার পোস্টার ছিঁড়ে দিচ্ছে।’

এদিকে গতকাল দলীয় এক সভায় যোগ দিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম ঢাকা ছিলেন। সন্ধ্যায় নির্বাচনী এলাকায় ফিরে তিনি গণসংযোগ করেন। যোগাযোগ করলে নুরুল বলেন, ‘এক প্রার্থী টাকা ছড়িয়ে ভোটের পরিবেশ বিনষ্ট করছে। তবে এতে কাজ হবে না। এবারও ভোটারেরা আমাকেই নির্বাচিত করবেন।’

এ তিন প্রার্থীর বাইরে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন (লাঙ্গল) আলোচনায় আছেন। অন্য দুই প্রার্থী হলেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান (ছড়ি) ও ইসলামী ঐক্যজোটের সাদিকুর রহমান (মিনার)।