খুলনার দৌলতপুরের মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমকে ‘অপহরণের’ অভিযোগে করা মামলায় দুই পরিবারের চারজন জামিন পাওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন।
জামিন পাওয়া চারজন হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ও তাঁর ভাই মো. মহিউদ্দিন এবং মহেশ্বরপাশা এলাকার রফিকুল আলম ওরফে পলাশ ও তাঁর ভাই মো. নূর আলম ওরফে জুয়েল।
তাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁদের জেলে ঢোকানোর জন্য রহিমা বেগম পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপন করেন। এর অংশ হিসেবে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এক মাস কারাভোগ করায় তাঁদের সম্মানহানি হয়েছে। তাঁরা রহিমা বেগম ও তাঁর সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
নিখোঁজের ২৯ দিন পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা মহানগর পুলিশের একটি দল ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে।
মাকে অপহরণের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দৌলতপুর থানায় মামলা করেছিলেন রহিমা বেগমের মেয়ে আদুরী আক্তার। ওই মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। অন্য দুজন হলেন রহিমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদার ও মহেশ্বরপাশা এলাকার হেলাল শরীফ।
জামিনে মুক্ত হওয়া গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত মিথ্যা মামলা। এ ধরনের মামলা আগেও তাঁরা দিয়েছেন। একের পর এক এভাবে চারটি মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। প্রতিটি মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। মামলার হুমকি দেওয়ার বিষয় আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আগে থেকেই জানিয়েছিলাম।’
আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা করবেন জানিয়ে কিবরিয়া বলেন, ‘আমাদের জেলে ঢোকানোর জন্য উনি (রহিমা বেগম) আত্মগোপন করেন। মরিয়ম মান্নান, তাঁর ভাই সাদীসহ রহিমা বেগমের ছয় সন্তান যে অপপ্রচার চালিয়েছেন, তা-ও পরিকল্পিত ছিল। পরিকল্পিতভাবেই আমাদের পুরো এক মাস জেল খাটানো হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া, তিনি রহিমা বেগমের ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের আপাতত মুক্তি দিয়েছেন। তবে ৪১ বছর বয়সে এসে জেল খাটতে হলো। আমাদের পরিবারকে হেয় করা হয়েছে। সামাজিকভাবে আমাদের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে মামলা করব। আমরা তাঁদের শাস্তি চাই।’
জামিনে মুক্ত হওয়া আরেক আসামি নূর আলম বলেন, ‘আমাদের বাড়ির সীমানার ভেতরে তাঁদের দেয়াল ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন রহিমা বেগম। আমরা শুধু দেয়াল ঠিক করতে বলেছিলাম। তখন নির্মাণাধীন সেই দেয়াল নিজেরাই ভেঙে আমার বাবা, ভাই ও আমার নামে দুটি মামলা দেন। পরে তো এই অপহরণ মামলা দিয়েছেন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি মামলাবাজ নারী হিসেবে পরিচিত।’
গত ২৭ আগস্ট রাতে খুলনার দৌলতপুর উপজেলার খানাবাড়ী এলাকার নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এ ঘটনায় মামলার পাশাপাশি রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়াম মান্নান খুলনা ও ঢাকায় একাধিক মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁর মাকে অপহরণের পর গুম করা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি। মায়ের সন্ধান পেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেন মরিয়ম মান্নান।