সখীপুরে সড়কের সেই ইট আবার ফেরত আনা হয়েছে

টাঙ্গাইলের সখীপুরে ভোটে পরাজিত হয়ে এই সড়কের ইট তুলে নিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। শুক্রবার সকালে বড়চওনা ইউনিয়নের কুতুবপুর ভিয়াইলপাড়া গ্রামে
ছবি: ইকবাল গফুর

টাঙ্গাইলের সখীপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হেরে একটি রাস্তার ইট অন্য একটি রাস্তার কাজে নিয়ে যাওয়া নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর আবার ওই ইট আগের সড়কে ফেরত আনা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রথম আলোতে ছাপা সংবাদের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে।

উপজেলার বড়চওনা ইউনিয়নের কুতুবপুর ভিয়াইলপাড়া গ্রামের সড়কটিতে আজ রোববার দুপুরে মানববন্ধনের আয়োজন করেন আওয়ামী লীগের মনোনীত পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউসুফ আলী ভূঁইয়া। এতে ৩০-৩৫ জন নারী-পুরুষ অংশ নেন। এ ছাড়া জেলা ও উপজেলার কমপক্ষে ১৫ জন আমন্ত্রিত গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

গত শুক্রবার রাতে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে এবং গতকাল শনিবার ছাপা সংস্করণে ‘এক সড়কের ইট তুলে নিয়ে অন্য সড়কে’ শিরোনামে সংবাদ ছাপা হয়। এ খবর প্রকাশের পর শনিবার প্রকল্পের সভাপতি হাবিবুল্লাহ মিয়া অন্য রাস্তায় নিয়ে যাওয়া ইট বরাদ্দকৃত রাস্তায় ফেরত আনেন। ওই ইট দিয়ে আগামীকাল সোমবার থেকে আবার কাজ শুরু হবে বলে হাবিবুল্লাহ জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

প্রথম আলোতে ছাপা সংবাদের বিষয়ে মানববন্ধনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউসুফ আলী ভূঁইয়া। মানববন্ধনে তাঁর বক্তৃতায় প্রথম আলোর সখীপুর প্রতিনিধি ইকবাল গফুরকে সখীপুর প্রেসক্লাবের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার ও তাঁর চরম শাস্তি দাবি করেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চারটি ইউপিতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর গ্রামীণ অবকাঠামো সড়ক সংস্কারের লক্ষ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য গত ২০ জুন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর গ্রাম কুতুবপুরে ছয়টি টিআর প্রকল্প দেন। এর মধ্যে ৪ নম্বর ক্রমিকে ‘কুতুবপুর ভিয়াইলপাড়া ইট-সলিংয়ের মাথা থেকে চাটারপাড় পর্যন্ত ইট সলিংকরণ’ প্রকল্পে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্বাচনের দুই দিন আগে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইউসুফ আলী ভিয়াইলপাড়া গিয়ে ওই প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।

নির্বাচনের আগে আনুমানিক ৪০ ফুট সড়কে ইট বিছানোর কাজ শেষ হয়। বাকি ২০০ ফুট সড়কে ইট বিছানোর কাজ নির্বাচনের পর শুরু হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর তিনি ক্ষিপ্ত হন। পরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ইউসুফ আলী ভূঁইয়ার অনুসারী ওই প্রকল্পের সভাপতি হাবিবুল্লাহ মিয়া ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে ইট ট্রাকে করে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অন্য একটি সড়কে ইট বিছানোর কাজে নিয়ে যান। এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাবিবুল্লাহ শনিবার ওই সড়ক থেকে তিন ট্রাক ইট নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে এক ট্রাক ইট তিনি নিজের বাড়িতে রেখে দিয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কের পাশেই স্তূপাকার করে রাখা ইট নেওয়া ছাড়াও সড়কে বিছানো ইট শ্রমিক দিয়ে তুলে নেওয়া শুরু করলে স্থানীয় ব্যক্তিদের বাধায় চলে যান হাবিবুল্লাহ মিয়া।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি (নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী) সদ্য বিজয়ী বড়চওনা ইউপির চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া সংবাদটি ১০০ ভাগ সত্য। তাঁরা নিজেদের সম্মান বাঁচাতে লোকদেখানো একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ইউসুফ আলী ভূঁইয়া নৌকার মনোনয়ন পেয়েও জামানত হারিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর মানসম্মান নষ্ট করেছেন। এ জন্য আমরা গ্রামবাসী ইউসুফ আলী ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আরেকটি মানববন্ধন করব।’

প্রকল্পের সভাপতি হাবিবুল্লাহ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এক ট্রাক ইট ফেরত আনা হয়েছে। কাল সোমবার আড়াই লাখ টাকার অসমাপ্ত কাজ আবার শুরু করা হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাহমিনা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, টিআর প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ করার পর টাকা দেওয়া হবে। প্রকল্প নিয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।