সেবা-শুশ্রূষায় সুস্থ হয়ে মেছো বাঘটি ফিরেছে বনে

অবমুক্ত করার আগে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারে অবস্থিত বিভাগীয় কার্যালয় বর্ষিজোড়ায় মেছো বাঘটি
ছবি: প্রথম আলো

মানুষের পাতা ফাঁদে আটকে যে মেছো বাঘটি নিজের জীবন হারাতে বসেছিল, সেই মানুষের ভালোবাসা আর সেবা-শুশ্রূষাতেই সুস্থ হয়ে উঠেছে প্রাণীটি। এরপর সেটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার চেনা-পরিচিত ঠিকানা বনে। গত শনিবার রাতে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মোহাম্মদপুর সেরা গ্রামে মেছো বাঘটিকে অবমুক্ত করে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। এই এলাকা থেকেই মেছো বাঘটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারে অবস্থিত সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর সেরা গ্রামের মো. তোরন মিয়ার বাড়ির কাছে লোহার বিশাল ফাঁদ পেতে মেছো বাঘটিকে আটক করা হয়েছিল। আটকের পর প্রায় তিন দিন অভুক্ত ছিল এটি। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বন বিভাগের জগন্নাথপুর উপজেলার কর্মী মো. জাকির হোসেন এ খবর জানতে পেরে তা বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়কে জানান। এরপর ১৭ জানুয়ারি বিভাগের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ারের নেতৃত্বে একটি দল মোহাম্মদপুর সেরা গ্রামে যায়।

সেখানে দলটি গ্রামের লোকজনকে মেছো বাঘ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয়, মেছো বাঘ মানুষের উপকার করে থাকে। মেছো বাঘা মারা যাবে না। কিছুদিন থেকে মেছো বাঘ সাধারণত যে এলাকায় ধরা পড়ে, মানুষকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে সেই এলাকায় অবমুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু ধরা পড়া মেছো বাঘটি আহত হওয়ায় সেটিকে আর সে এলাকায় অবমুক্ত করা হয়নি। পরে এদিন (১৭ জানুয়ারি) রাতে খাঁচাসহ ওই মেছো বাঘকে উদ্ধার করে বিভাগীয় কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারে অবস্থিত বিভাগীয় কার্যালয় বর্ষিজোড়ায় এত দিন প্রাণীটিকে চিকিৎসা, খাবারসহ সেবা-শুশ্রূষা দেওয়া হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ায় শনিবার রাতে মেছো বাঘটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ার আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেছো বাঘটিকে যে এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। সেখানেই তাকে ধরা হয়। সে ওই জায়গায় অভ্যস্ত। এ জন্য তার চেনা-পরিচিত স্থানে নিয়ে তাকে ছাড়া হয়েছে। সেখানেই সে ভালো থাকবে।’

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেছো বাঘ বিড়ালজাতীয় প্রাণী। দেখতে অনেকটা বাঘের মতো হওয়ায় মেছো বাঘ নামে পরিচিত। এগুলো হাওর, জলাশয় ও জলাভূমির আশপাশের ঝোপঝাড়, নির্জন কবরস্থানের ঝোপঝাড় ও বাঁশঝাড়ে আবাস গড়ে। এসব স্থানেই চলাফেরা ও বাচ্চা প্রসব করে।

কখনো ধানখেতে, সবজিখেতে, কখনো বাড়ির পরিত্যক্ত ঘরের কোণে আশ্রয় নেয়। জলাশয়ের দুর্বল ও রোগাক্রান্ত মাছ শিকার করে খায়। ধানখেতের জন্য ক্ষতিকর ইঁদুর শিকার করে। ফসল বাঁচায়। কৃষকের উপকার করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়, ঝোপঝাড় উজাড়, জনবসতির সম্প্রসারণের ফলে প্রাণীটির আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বেই মেছো বাঘ এখন একটি সংকটাপন্ন প্রাণী। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর সংগঠন আইইউসিএন মেছো বাঘকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। প্রাণীটি বাংলাদেশেও বিপন্ন।

আরও পড়ুন

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ার আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন মূলত যেখানে মেছো বাঘ ধরা হয়, মানুষকে বুঝিয়ে সেখানেই অবমুক্ত করে আসি। তবে প্রায়ই মেছো বাঘ আটক হওয়ার পর ধস্তাধস্তি করে আহত হয়। তখন তাদের অফিসে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসা ও সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে তোলার পর তাদের বসবাসের উপযোগী স্থানে ছাড়া হয়।’

আরও পড়ুন