দেড় মিনিটে কাপাসিয়ার ২৩১ গ্রামের নাম বলতে পারেন তিনি

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার আক্তার জামান দেড় মিনিটে নিজের উপজেলার ২৩১ গ্ৰামের নাম বলতে পারেন
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সর্ব পশ্চিমের গ্রাম বাঘিয়ার বাসিন্দা আক্তার জামান। তিনি ‘আক্তার মাস্টার’ নামে পরিচিত। পাশের ভুলেশ্বর গ্রামের হাফিজ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শেষে গত বছর অবসরে গেছেন তিনি। দেড় মিনিটে নিজের উপজেলার ২৩১টি গ্রামের নাম মুখস্থ বলতে পারেন তিনি। এ কারণে উপজেলাজুড়ে পরিচিতি তাঁর।

আক্তার জামান ৩০ সেকেন্ডে ৬৪ জেলার নাম বলতে পারেন। দেড় মিনিটে বলতে পারেন কাপাসিয়ার ২৩১টি গ্রামের নাম। এ ছাড়া তাঁর মুখস্থ আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ও পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের ১১৮ লাইনের ‘কবর’ কবিতা।

আক্তার জামান বলেন, শিক্ষকতায় সময় দেওয়ার পাশাপাশি ঘুরে বেড়ানোর শখ ছিল তাঁর। ছুটির দিনে নিজের বাইসাইকেলে করে নিজের উপজেলার গ্রাম ঘুরে দেখতেন। একসময় মনে হলো, গ্রামের নামগুলো মুখস্থ করলে ভালো হবে। প্রথমে খাতায় সব গ্রামের নাম লিখে মুখস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেগুলো তিনি মুখস্থ রাখতে পারছিলেন না। এরপর ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। ১ নম্বর ইউনিয়ন থেকে নতুন করে বাইসাইকেল নিয়ে ঘুরতে শুরু করলেন। একের পর এক গ্রাম ঘুরে ঘুরে গ্রামের দৃশ্যগুলো মনে গেঁথে নিতে থাকেন। এ যাত্রায় তিনি সফল হন। এভাবে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের সব গ্রাম ঘুরে নাম বলার চর্চা করতে থাকেন। বর্তমানে নির্ভুলভাবে নিজের উপজেলার নামগুলো বলতে পারেন তিনি।

আক্তার জামান বলেন, ‘গ্রামের নামগুলো বলার সময় আমার চোখের সামনে প্রত্যেকটি এলাকার বিশেষ কিছু দৃশ্য ভেসে ওঠে। মানুষগুলো দেখি। সেখানকার বড় বড় গাছপালা, দিঘি, মাঠ চোখে ভাসে। ভালো লাগে যখন কেউ আমার এই দক্ষতা দেখে আশ্চর্য হয়। এই বয়সে এসে আমি মুখস্থ রাখতে পেরেছি ভেবে নিজের কাছেই ভালো লাগে। আমার কাছে গ্রামের নাম শুনে ভিডিও করে নিয়ে যান অনেকে। মানুষের আগ্রহ দেখে উৎসাহ পাই।’

এই শিক্ষকের প্রাক্তন ছাত্র নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লাসে স্যার আমাদের বই না দেখেই পড়াতেন। মুখস্থ রাখার অসাধারণ দক্ষতা স্যারের মধ্যে সব সময় দেখেছি। খুব নিভৃতচারী মানুষ তিনি। নিজের চেষ্টায় অসাধারণ সব দক্ষতা অর্জন করে নতুন প্রজন্মের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি।’

কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমানত হোসেন খান বলেন, ‘বিশেষ দক্ষতা দেখিয়ে পুরো উপজেলায় পরিচিতি পেয়েছেন আক্তার জামান। আমরা তাঁকে নিয়ে গর্ব করি। কোনো বিশেষ দিবসে তাঁকে সম্মাননা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এতে তিনি উৎসাহিত হবেন। পাশাপাশি নতুন প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে আরও বেশি জানবে, কৌতুহলী হবে।’