সিলেটের আকাশে রোদ, কমছে বন্যার পানি

সিলেটে সড়ক থেকে বন্যার পানি নামতেই ক্ষয়ক্ষতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আজ শুক্রবার গোয়াইনঘাট উপজেলার গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কেছবি : প্রথম আলো

সিলেটে নতুন করে বৃষ্টিপাত হয়নি। আকাশেও রোদের দেখা মিলেছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সব কটি নদ-নদীর পানি কমেছে।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢল না হলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে। এ রকম আবহাওয়া থাকলে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পানি পুরোপুরি নেমে যাবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন বাসিন্দা। এ অবস্থায় জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলায় প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা বেশি। এ পাঁচ উপজেলায় অন্তত ৭০০ গ্রাম এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার কিছু গ্রামও প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন বাসিন্দা। এ অবস্থায় জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছে। মোট ৪ হাজার ৮০২ জন বানভাসি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, পানিবন্দী পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শুকনা ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

এদিকে বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেও পানি কমতে শুরু করেছে। গত দুদিন ধরে পানিতে ডুবে থাকা গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়ক এবং গোয়াইনঘাট-জাফলং সড়ক থেকে পানি নেমেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর এ দুটি সড়কে বন্যার ক্ষত স্পষ্ট হয়েছে। সড়ক দুটোর কয়েকটি স্থানে খানাখন্দ আর গর্ত তৈরি হয়েছে। তবে উপজেলার রাধানগর-জাফলং সড়কের কিছু অংশে এখনো পানি আছে।

বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর অনেক সড়কে দেখা দিয়েছে খানাখন্দ ও গর্ত। আজ সকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার গোয়াইনঘাট-জাফলং সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, উপজেলাটিতে তিনটি নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, কালভার্টগুলো মেরামত ও সংস্কার করে জনচলাচলে উপযোগী করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি

বন্যাকবলিত কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলাকে বন্যাদুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে একটি সংগঠন। গতকাল বৃহস্পতিবার জৈন্তিয়া কেন্দ্রীয় পরিষদ নামের সংগঠনটি জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের কাছে স্মারকলিপি দেয়। এসব এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহের দাবিও জানানো হয়। স্মারকলিপি দেওয়ার সময় সংগঠনটির সভাপতি গিয়াস আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন বেলাল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন