খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শিশিরভেজা মাঠে ওরা

গতকাল বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম, অনুশীলন ও ব্যবহারিক পরীক্ষা।

হকি খেলার ব্যবহারিক পরীক্ষা চলছে। গতকাল দুপুরে দিনাজপুর বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি কার্যক্রমের পরীক্ষা নেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

কেউ হতে চায় ক্রিকেটার, কেউবা ফুটবলার। অ্যাথলেটিকসে নেশা আছে কারও, কারও শখ আর্চারিতে। ইচ্ছা, নেশা, শখ ও মনের চাওয়া পূরণ করতে গতকাল রোববার সকালে মাঠে জড়ো হয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত দেড় সহস্রাধিক ছেলেমেয়ে উপস্থিত হয়েছিল দিনাজপুর সদর উপজেলার বাঁশেরহাট এলাকায় বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে।

গতকাল রোববার বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম, অনুশীলন ও ব্যবহারিক পরীক্ষা। বিকেএসপির প্রধান ফটক দিয়ে ছেলে-মেয়েদের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন অভিভাবকেরা।

বিকেএসপির দিনাজপুর আঞ্চলিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের সাধারণ শিক্ষাসহ দীর্ঘমেয়াদি বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২১টি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। দুই দিনব্যাপী ভর্তি কার্যক্রমের প্রথম দিনে ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। বাছাই শেষে যোগ্যদের নিয়ে ঢাকায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে উত্তীর্ণদের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি করানো হবে।

গতকাল দুপুরে বিকেএসপি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, নানা রঙের জার্সি গায়ে হাজারো শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে রঙিন হয়ে উঠেছে বিকেএসপির মাঠ। রংপুর বিভাগের ৮ জেলা থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছে তারা। প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা তারপর ব্যবহারিক। ছোট ছোট দলে ভাগ করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। আর্চারি, অ্যাথলেটিকস, বক্সিং, বাস্কেটবল, ভলিবল, ক্রিকেট, ফুটবল, হকিসহ মোট ২১টি বিভাগের ভর্তি কার্যক্রম চলছে।

দিনাজপুর সদর উপজেলার কাউগাঁ এলাকা থেকে আর্চারি বিভাগে পরীক্ষা দিতে এসেছেন রাইসা শাহ। কাউগাঁ এলাকায় পাঁচাবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসা। সে জানাল, বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বিকেএসপিতে এসেছে। মাস চারেক আগে প্রথম দিনাজপুর স্টেডিয়ামে আর্চারি খেলার ক্যাম্পে অংশ নিয়েছিল। তার পর থেকে আর্চারি খেলা ভালো লাগতে শুরু করে তার। পরীক্ষা দিতে এসেছে যদি সুযোগ পাওয়া যায় বিকেএসপিতে।

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপরীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ফুটবলে পরীক্ষা দিতে এসেছে ৭ জন। সঙ্গে তাদের শিক্ষকও আছেন। সাতজনের মধ্যে পাঁচজনের বাবা কৃষক। একজনের বাবা শিক্ষক। সাগরিকার বাবা নাইট কোচের চালক। সাগরিকা বলে, ‘বাবার খুব ইচ্ছা, আমি ফুটবলার হই। ফুটবলার হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’

মাঠের বাইরে অপেক্ষমাণ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজিবুল আলম। জানালেন, দুই ছেলের বাবা তিনি। বড় ছেলে টেবিল টেনিসে ঢাকা বিকেএসপিতে পড়ছে। ছোট ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। তাকে স্থানীয় ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করে দিয়েছেন। তবে ছেলের ইচ্ছা, ফুটবলার হওয়ার। তাই ছেলেকে নিয়ে এসেছেন ভর্তি পরীক্ষা দিতে।

দিনাজপুর বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রের উপপরিচালক মাসুদ হাসান বলেন, ‘ট্যালেন্ট বাছাই ক্যাম্পসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শেষে শিক্ষার্থী চূড়ান্ত করা হবে। আজ (গতকাল) যারা পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের মধ্যে থেকেই একদিন ভালো খেলোয়াড় তৈরি হবে।’