গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিলেন আজমত উল্লা

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে মঙ্গলবার বিকেলে গিয়ে সংস্থাটির দায়িত্ব বুঝে নেন আজমত উল্লা খান
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি নির্বাচনের পরাজিত নৌকার মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান আজ মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।

দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর আজমত উল্লা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংবাদিকদের বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্রচুর শিল্পকারখানা রয়েছে। আমাদের দেশের অর্থনীতির প্রয়োজনে যেমন শিল্পকারখানা রক্ষা করতে হবে, ঠিক একইভাবে কৃষিজমিও রক্ষা করতে হবে। গাজীপুরের যেসব নদনদী রয়েছে, সেগুলো রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের ওপর, যাতে করে মানুষ এখানে ভালোভাবে নিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারে।’

আরও পড়ুন

গাজীপুরে ভালো কোনো আবাসিক এলাকা নেই। একটি সুন্দর আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে আজমত উল্লা বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ নগরায়ণ সৃষ্টি করা। ঘরবাড়িগুলো অবশ্যই পরিকল্পনা মাফিক হতে হবে। নালা ডোবা যেগুলো রয়েছে, সেগুলোকে সংস্কার করতে হবে, কিছু পুনঃখনন করতে হবে। বিশাল জলাভূমিকে পরিবেশ আইন অনুয়ায়ী রক্ষা করা হবে। এই কাজগুলোর জন্য জনবল প্রয়োজন। এখানে জনবলের সংকট রয়েছে। আমাদের একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। জনবল বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।’

আরও পড়ুন

২০২২ সালের নভেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন নতুন এ সংস্থা গঠিত হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আদলে। মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা আমান্তা টাওয়ারে এই কর্তৃপক্ষের কার্যালয়, ভবনটি আগে রাজউকের আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত হওয়ার পর থেকে যুগ্ম সচিব হেমায়েত হোসেনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে সরকার। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন আজমত উল্লা।

জনবল না থাকায় রাজউকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কার্মচরীদের গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে যুক্ত করা হয়। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে সাতজন কর্মকর্তা–কর্মচারী দিয়ে তাঁদের কার্যক্রম চলছে। এখানে জনবলের সংকট রয়েছে। নতুন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এটির কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বিশ্বাস মোস্তাফিজুরের।

গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের কাছে পরাজিত হন আজমত উল্লা খান। নির্বাচনে হারের তিন দিন পর তাঁকে গণভবনে ডেকে পাঠান দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকে আলোচনা চলছিল, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে গত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আজমত উল্লাকে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২০-এর ধারা ৭ (১) ও ৭ (২) অনুযায়ী আজমত উল্লা খানকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছর মেয়াদে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো।

চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেলেও দলীয় পদে থাকতে কোনো বাধা নেই বলে দাবি করেন আজমত উল্লা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ‘চ’ ধারায় স্পষ্ট বলা রয়েছে। সংগঠন বলতে রাজনৈতিক সংগঠন নয়, সেখানে মিন করা হয়েছে বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠন, ক্যালচারাল সংগঠন, আর্থিক সংগঠন। এ ধরনের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকলে সে ক্ষেত্রে তিনি চেয়ারম্যান ও সদস্য হতে পারবেন না। এ ছাড়া আমার যেহেতু কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নাই সুতরাং অন্য কোনো প্রশ্নই আসে না।’

এ বিষয়ে গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি আজমত উল্লাকে দলীয় পদ ছাড়াতে হবে না। অন্যান্য জায়গায় এমন নিয়োগ হয়েছে। তাঁদের দলীয় পদ ছাড়তে হয়নি।’